শান্তনু কর ও সুমন করাতি: স্কুলবাড়ি নাকি সাপের ডেরা? এক-দু’টি নয়, ৩৮ টি বিষধর গোখরো সাপ (Snakes)। কোনওটা নেমে আসছে সিঁড়ি দিয়ে। কোনওটা আবার লিকলিকে শরীর নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বারান্দায়। মাঝেমধ্যে ফণা তুলে উঁকি দিচ্ছে এদিক ওদিক। দেখেশুনে আতঙ্ক হওয়াই স্বাভাবিক। তার চেয়েও বড় কথা, এহেন দৃশ্য যদি স্কুলে দেখা যায় তাহলে তো কথাই নেই। যথারীতি সাপের ভয়ে বন্ধ স্কুল। লাটে উঠেছে পড়াশোনা। উদ্ধারের ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) মাড়োয়ারি বালিকা বিদ্যালয়ে। ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে একদিনের জন্য স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। দু’দিন স্কুল বন্ধ রেখে সাপমুক্ত অভিযান চলবে। বৃহস্পতিবার থেকে ফের শুরু হবে পঠনপাঠন।
স্কুলের যত্রতত্র সাপেদের অবাধ বিচরণ। ভয়ে কাঁটা দিদিমণি থেকে শিক্ষাকর্মী। ছাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ায় স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে হল। আর ছুটির পর স্কুলবাড়িকে পুরোপুরি সাপমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেইমতো পরিবেশ কর্মীদের সাহায্য নেন তারা। ধারণা ছিল একটি, দুটি বা বড়জোড় তিনটি সাপ উদ্ধার হবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত উদ্ধার হল তিরিশটি বিষাক্ত সাপ! সবগুলিই বিষধর গোখরো সাপের বাচ্চা। তবে বড় সাপেরা এখনও অধরা। তাই স্কুল পুরোপুরি বিপদমুক্ত (Out of danger) বলে মনে করছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। বড় সাপেদের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি বাচ্চা সাপ ও রয়েছে বলে আশঙ্কা। সেই কারণে মঙ্গলবার স্কুল বন্ধ রেখে ফের অভিযান চলবে। বনদপ্তরের সাহায্য নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
প্রায় একই পরিস্থিতি হুগলির চুঁচুড়ায়। দিন দশেক আগে ক্লাস চলাকালীন শিক্ষিকাদের ঘর থেকে স্কুলের তিন জায়গা থেকে কালাচ, শাঁখামুটি, গোখরো এবং দাঁড়াশ সাপ উদ্ধার করেন সর্প বিশেষজ্ঞ চন্দন ক্লেমেন্ট সিং। ঘটনার পর থেকেই আতঙ্ক ছিল ছাত্রী এবং শিক্ষিকাদের মধ্যে। খবর পেয়ে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, দিন দু’য়েকের মধ্যেই বিদ্যালয় চত্বর সাফাই করা হবে। কিন্তু তা আর হয়নি। তাই স্কুলের শিক্ষিকা ও চন্দন ক্লেমেন্ট দুই সহকারীকে নিয়ে চুঁচুড়ার অধ্যাপক জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ বালিকা বিদ্যালয়ে পার্থেনিয়াম সাফ করা শুরু করেন। তাঁদের সঙ্গে হাত মেলান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তিতান মুখোপাধ্যায় ও মৌমিতা মুখোপাধ্যায়। জঙ্গলে নেমে খালি হাতেই পার্থেনিয়াম গোড়া থেকে উপড়ে ফেলা হয়। চন্দন বলেন, “দিন দশেক আগে সাপ উদ্ধার করার সময়ই কর্তৃপক্ষকে আগাছা পরিষ্কারের কথা বলেছিলাম। কিন্তু বিদ্যালয় অপারগ। তাই শিক্ষিকাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে আমরাই এগিয়ে এসেছি।”
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তিতান মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “পুরসভাকে জানিয়েও কাজ হয়নি। ছাত্রীদের কথা ভেবে আমরাই বিদ্যালয় চত্বর পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।” পুর-পারিষদ সদস্য জয়দেব অধিকারী বলেন, “ডেঙ্গি রুখতে সাফাই কর্মীরা ব্যস্ত রয়েছেন। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমস্যার কথা লিখিতভাবে জানালে নিশ্চয়ই তড়িঘড়ি উদ্যোগ নেওয়া হতো।” যদিও গত শুক্রবারই পুরসভাকে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে বলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা দাবি করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.