নিজস্ব সংবাদদাতা, হলদিয়া: নন্দীগ্রামে (Nandigram) ফের বিজেপিতে ভাঙন। নন্দীগ্রাম বিধানসভায় তিনবারের বিজেপি প্রার্থী ছিলেন বিজন দাস। বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী অনুগামীদের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন। শুক্রবার রাতে নন্দীগ্রাম ব্লক তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে বরণ করে নেন তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান পীযূষকান্তি ভূঁইয়া, যুব তৃণমূল সভাপতি আসগর আলি, নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ-সহ অনেকে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নন্দীগ্রামে বিজেপির প্রথম সারির নেতাকে দলে পেয়ে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল শিবিরে।
২০০৯ সালে নন্দীগ্রাম বিধানসভা উপনির্বাচন, ২০১১ সাল এবং ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছিলেন বিজন। এলাকায় পুরানো বিজেপি নেতা। তাঁর হাত ধরে সংগঠনের প্রসার ঘটেছে। নন্দীগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে এক মঞ্চে পাশাপাশি তাঁকে দেখা গিয়েছে। এখন সেই বিজন বিজেপিকে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলতে দ্বিধা করেন না। স্থানীয় মানুষের মধ্যে ‘সাম্প্রদায়িকতা’র সেই ‘বিষ’ ছড়ানোর ক্ষেত্রে শুভেন্দু অনুগামী দুর্নীতিবাজদের চক্রান্ত রয়েছে বলে তিনি জোরালো অভিযোগ করেছেন।
বিজন বলেন,”আত্মমর্যাদা নিয়ে আর বিজেপি করা যাচ্ছে না। শুভেন্দু অনুগামীদের দৌরাত্ম্য দলের শেষ করছে। একদিন যাঁরা নন্দীগ্রামের মাটিতে বিজেপিকে হাতে গড়েছিলেন, আজ তাঁরা ব্রাত্য। তাঁদের এড়িয়ে দলের আলোচনা-সহ অন্যান্য কাজ হয়। সোজা কথায়, আমরা যারা আদি বিজেপি,আমাদেরকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। দাপট দেখাচ্ছে শুভেন্দু এবং তাঁর লোকজন। আর এভাবেই ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে বাংলায় লুঠতরাজ কায়েম করতে মরিয়া বিজেপি। এভাবে কোনও দল চলতে পারে না। সব কিছু ভেবে বাংলায় মা-মাটি-মানুষের সরকারের প্রতি আস্থা রাখলাম। এবার মানুষের সঙ্গে থেকে কাজ করতে চাই।” এ বিষয়ে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে তৃণমূল দলের বিরুদ্ধে প্রলোভন দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন,”ভুল কথা বলছেন বিজনবাবু। ওঁকে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে দলের পদে বসানো হয়েছিল। কিন্তু উনি আমাদের কাউকে না জানিয়ে দল ছাড়লেন। কিছু প্রলোভন পেয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তবে আমাদের ক্ষতি হবে না।”
বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে বছর খানেক আগেই এসেছেন জয়দেব দাস-সহ বহু মানুষ। মাস খানেক আগেও বিজেপি ছেড়ে কিছু মানুষ নন্দীগ্রামে তৃণমূল দলে যোগ দিয়েছেন। ফের বিজন দাসের ঘটনা নন্দীগ্রামের জোর চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র জানান,”একসময় আবেগে কিছু মানুষ বিজেপির পতাকা ধরেছিলেন। এখন ভুল বুঝতে পেরে ওই দল ছাড়ছেন। বাংলার মানবিক সংহতি রক্ষার প্রশ্নে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। বিজনবাবুকে স্বাগত জানাই।” ছাত্রাবস্থায় নন্দীগ্রাম সীতানন্দ কলেজে ছাত্র পরিষদের ইউনিয়ন সদস্য ছিলেন বিজন। সেই রাজনৈতিক পর্ব কাটিয়ে বৃহত্তর রাজনীতির অঙ্গনে তিনি দীর্ঘদিন বিচরণ করেছেন। তাঁর সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তৃণমূল নন্দীগ্রামে সংগঠন আরও মজবুত করতে প্রস্তুত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.