প্রতীকী ছবি।
রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: নিজের নামে মোটা অঙ্কের দুর্ঘটনাজনিত বিমা করানো ছিল। জীবিত অবস্থাতে সেই টাকা হাতাতে পরিবারের সদস্যদের দিয়ে এক যুবককে খুন করা হয়। তারপর সেই দেহকে বিমাকৃত ব্যক্তির বলে দাবি করা হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। পুলিশের তদন্তে গ্রেপ্তার হয়ে যাবজ্জীবন সাজা হল একই পরিবারের তিন সদস্যের। চিত্রনাট্যকেও হার মানায় পূর্ব বর্ধমানের কালনার এই ঘটনা।
সোমবার কালনায় ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক বিবেকানন্দ সুর মূল অপরাধী দয়াল দাসমজুমদার, তার দাদা রুই দাসমজুমদার ও ভাগ্নে সুমন বিশ্বাসকে যাবজ্জীবন সাজা ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা ঘোষণা করেন। অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সাজা ঘোষণা করেছেন বিচারক। মামলায় আরেক অভিযুক্ত দয়ালের ছেলে দেবজ্যোতি দাসমজুমদার ফেরার রয়েছে। দয়াল ও তার দাদার বাড়ি কাটোয়া থানার চরপাতাইহাটে। সুমনের বাড়ি নদিয়ার শিকারির ধানতলায়। এই মামলার সরকারি আইনজীবী অরূপ ভট্টাচার্য জানান, ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল। ওই দিন পূর্বস্থলী থানার বিশ্বরম্ভা এলাকায় রাস্তার ধার থেকে ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয় হুগলির বলাগড়ের জিরাটের বাসিন্দা অভিজিৎ দে নামে এক যুবকের। অরূপবাবু জানান, ঘটনার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল। দয়ালের স্ত্রী স্বামীর নামে কাটোয়ায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় জীবনবিমা করায়। দুর্ঘটনাজনিত কারণে মারা গেলে কোটি টাকার উপর মিলবে। কিন্তু না মরেই সেই টাকা পেতে ষড়যন্ত্র শুরু করে দয়াল ও তার পরিবারের লোকজন। সেই টাকা হাতানোর জন্যই এই খুনের পরিকল্পনা করেছিল। বলাগড়ে গিয়ে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে দয়াল। সেখানেই অভিজিতের সঙ্গে দয়ালের পরিচয় হয়েছিল। ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়। তার পর পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিজিৎকে চাকরি করে দেওয়ার প্রলোভন দেখায় দয়াল। তাকে ডেকে পাঠিয়ে বাড়ি নিয়ে আসে। ঘটনার দিন অভিজিৎকে মদ্যপানও করায় অভিযুক্তরা। তারপর মাথায় লোহার রডের আঘাত করে খুন করে। অভিজিতের মুখে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেহ বিকৃত করে দেওয়া হয়।
মৃতদেহটি দয়ালের, সেটা প্রমাণ করতে দয়ালের পোশাক পরানো হয় অভিজিতের দেহে। মৃতদেহের জামার পকেটে দয়ালের একটি পরিচয়পত্র ও ফোন নম্বর রেখে দেওয়া হয়। তারপর বিশ্বরম্ভা এলাকায় রাস্তার পাশে দেহ ফেলে দিয়ে যায়। নিজের পরিচয় গোপন করে গা ঢাকা দেয় দয়াল। তার পরিবারও দয়ালের নিখোঁজ হওয়ার অভিনয় করতে থাকে স্থানীয়দের কাছে। পরে পুলিশ ওই মৃতদেহ উদ্ধার করে। সেই সঙ্গেই দয়ালের পরিচয়পত্র ও ওই ফোন নম্বর দেখেই পুলিশ দয়ালের দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, অভিজিতের মৃতদেহটিকে নিজের ভাইয়ের বলে দাবি করে দয়ালের দাদা রুই দাস। মৃতদেহ নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্যও আবেদন করে দয়ালের পরিবার। কিন্তু তদন্তকারী অফিসারদের সন্দেহ হওয়াতেই সেই মৃত দেহ দয়ালের পরিবারের হাতে না দিয়ে খোঁজ খবর শুরু করে পুলিশ।
এদিকে, অভিজিতের স্ত্রী জোৎস্না দে স্বামী বাড়ি না ফেরায় বলাগড় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই ওই মৃতদেহ শনাক্ত করতে মর্গে যান জোৎস্না। সেখানেই সব রহস্য ফাঁস হয়ে যায়। জোৎস্না পুলিশকে জানান, মৃতদেহটি তাঁর স্বামীর হলেও পরনের পোশাকটি দয়ালের। পুলিশ গভীর ষড়যন্ত্র বুঝে ফেলে। রুই দাস মজুমদারকে গ্রেপ্তার করে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ। তৎকালীন তদন্তকারী অফিসার সুদীপ দাস এই মামলার তদন্ত শুরু করে করেন। তারপরই পুরো গল্প সামনে আসে পুলিশের কাছে। দয়ালকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে সুমনও ধরা পড়ে। গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিচারে সাজা হয় এদিন। এই সাজা শোনার পরই খুশি প্রকাশ করেছেন মৃত অভিজিতের পরিবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.