Advertisement
Advertisement

জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বাবা, কন্যাশ্রীর টাকা নিয়ে মুম্বই পালাল ৩ বোন

ব্যাপারটা কী?

3 school student sister escaped from home to avoid marriage in Durgapur | Sangbad Pratidin
Published by: Paramita Paul
  • Posted:October 30, 2023 8:04 pm
  • Updated:October 30, 2023 8:04 pm  

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: বাবা জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তীব্র আপত্তি ছিল স্কুলে পড়া তিন বোনের। তাদের মধ্যে দুজন আবার নাবালিকা। তাই বিয়ে আটকাতে দিদির ‘নেতৃত্বে’ কন্যাশ্রীর টাকা নিয়েই মুম্বই পালাল তিন বোন। টাকা শেষ হতেই ফিরে আসে কলকাতায়। পরে পুলিশ দমদম থেকে উদ্ধার করে তিন বোনকে।

দুর্গাপুর-ফরিদপুর থানার তিলাবনি গ্রামের ওই পলাতক তিন বোনের মধ্যে বছর ষোলোর ছোট বোন লাউদোহা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির পড়ুয়া। বছর সতেরোর মেজো বোন বীরভূমের পাথরচাপুরি উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী। পলাতক টিমের ‘ক্যাপ্টেন’ দিদি নেহা খাতুন পাণ্ডবেশ্বর গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়েন। এবার অকৃতকার্য হয়ে পরের বছর ফের উচ্চমাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাবা নাসিমুদ্দিন খান বেসরকারি কারখানায় অতি সাধারণ চাকরি করেন। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খুব ভালো নয়। আর্থিক দুরবস্থার কারণেই সম্প্রতি বড় মেয়ে নেহা খাতুন এবং মেজো বোনের বিয়ে ঠিক করেন বাবা। পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যেই দুই মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক সেই বিয়েতে আপত্তি ছিল দুই বোনের।

Advertisement

[আরও পড়ুন: পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচের রাতে চলবে অতিরিক্ত মেট্রো, জেনে নিন সময়সূচি]

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এরপরই গত অষ্টমীর দিন রাতে দিদির ‘নেতৃত্বে’ তিন বোন ঘর ছেড়ে পালায়। দিদির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কন্যাশ্রীর টাকা ও ঘরের কিছু টাকা মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা নিয়ে পালায় তারা। যাওয়ার আগে বাবার মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তিন বোন। যাতে কেউ হদিশ না পায় তার জন্যে দিদির বুদ্ধিতেই বাবার মোবাইল ফোনের সিম ফেলে দিয়ে নতুন সিম নেয় তারা। মেয়েকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দুর্গাপুর-ফরিদপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিন বোন প্রথমে বাসে চেপে আসানসোল আসে। সেখানে নতুন সিম ভরে মোবাইলে। তারপর সেখান থেকে ট্রেনে চেপে মুম্বইয়ে চলে যায় তিন বোন। কিন্তু সেখানে দুই দিনের বেশি থাকতে পারেনি। টাকা শেষ হতে থাকে। মুম্বই থেকেই টাকার জন্যে পান্ডবেশ্বরে তাঁদেরই এক আত্মীয়কে ফোন করে দিদি। ওই আত্মীয় তা জানায় নাসিমুদ্দিনকে। তিনি জানান পুলিশকে। সেই ফোন থেকেই পলাতকদের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। মুম্বই থেকে ফের হাওড়ায় ফিরে আসে তিন বোন। তারপর সেখান থেকে দমদমে স্টেশনে যায়। রবিবার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে দুর্গাপুর-ফরিদপুর থানার পুলিশ জানতে পারে ওই তিন বোন দমদমে স্টেশনে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় দমদম জিআরপি সঙ্গে। জিআরপি স্টেশনে তিন বোনকে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে দেখে পাকড়াও করে।

[আরও পড়ুন: পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচের রাতে চলবে অতিরিক্ত মেট্রো, জেনে নিন সময়সূচি]

রবিবার দুপুরে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর-ফরিদপুর থানার পুলিশ। সোমবার উদ্ধার হওয়া দুই নাবালিকাকে চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারপরই দুই নাবালিকাকে আসানসোলের জুভেনাইল আদালতে এবং বড় বোন নেহা খাতুনকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। দুই নাবালিকার ১৮ বছরের নিচে যাতে বিয়ে দেওয়া না হয় সেইজন্য বাবা নাসিমুদ্দিন খানকে দিয়ে মুচলেকা লেখানো হয় এবং আদালতের নির্দেশে তিন বোনকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয় পরিবারের কাছে। বাবা নাসিমুদ্দিন খান জানান, “কন্যাশ্রীর কিছু টাকা ছিল বড় মেয়ের অ্যাকাউন্টে। সেটা ও ঘরে থাকা টাকা নিয়ে বেরিয়ে যায় তিন বোন। দুর্গাপুর – ফরিদপুর থানার পুলিশ ফিরিয়ে দিয়েছে আমার তিন মেয়েকে। তাঁদের ধন্যবাদ।” এই বিষয়ে দুর্গাপুর – ফরিদপুর ব্লকের বিডিও দেবজিৎ দত্ত জানান, ” নাবালিকা বিবাহ রোধে ব্লক ও জেলা থেকে ধারাবাহিক প্রচার চালানো হয়। স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাব এই সচেতনতা প্রচার চালায়। পঞ্চায়েত স্তরেও প্রচার চালানো হয়। আমি ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলবো।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement