সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: যুদ্ধবিধ্বস্ত ইজরায়েলে আটকে বাংলার ৩ সন্তান। কেউ বিমানের টিকিট কেটেও বাড়ি ফিরতে পারেননি। কেউ আবার আটকে কর্মস্থলেই। কেউ আটকে একা তো কেউ আবার পরিবার নিয়েই প্রাণভয়ে দিন কাটাচ্ছেন ইজরায়েলের শহরে। সেখান থেকে ভিডিও কল মারফত পরিবারকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন তাঁরা। কিন্তু তবু কি কাটছে চিন্তার মেঘ?
আর কয়েকদিন বাদেই কৈলাস থেকে মর্ত্যে ফিরবে উমা। কিন্তু সেই উৎসবের আগে কি মায়ের কোলে ফিরবেন ইজরায়েলে আটকে থাকা ছেলেমেয়েরা, সেই চিন্তায় আপাতত নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন অভিভাবকরা। যেমন বনগাঁর কুণ্ডু পরিবার।
গত ১৯ মার্চ বনগাঁর শক্তিগড়ের যুবক সাত্যকি কুণ্ডু পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি করতে ইজরায়েলে পাড়ি দেন। ছুটিতে ৯ তারিখ বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু বিমান বাতিল হয়। আপাতত বিমানবন্দরেই রয়েছেন তিনি। দ্রুতই বাড়ি ফিরবেন। ভিডিও কলে বাড়িৃর সকলের সঙ্গে নিয়মিক কথা হচ্ছে সাত্যকির। তবু চিন্তা কাটছে না মা বুলাদেবীর। তিনি জানান, “জানান, টিভিতে ইজরায়েলের খবর পাওয়ার পর থেকে দুশ্চিন্তায় আছি। ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে ছেলে বলেছে, সুস্থ ও সুরক্ষিত আছে।” তবে ছেলে যতক্ষণ না বাড়ি ফিরছেন, ততক্ষণ চোখে ঘুম আসছে না পরিবারের।
একই অবস্থা হুগলির অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পেশায় উত্তরপাড়া প্যারীমোহন কলেজের অধ্যাপক অনিন্দিতার স্বামী সৌরভ কুমার ইজরায়েলের তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নায়ুবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করছেন। পুজোর আগে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। ১৬ তারিখ বিমানের টিকিটও কাটা ছিল। কিন্তু যুদ্ধের জন্য ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়ার সমস্ত বিমান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার পর চালু হবে কি না, তাও এখনও নিশ্চিত নয়। ফলে সেখানে আটকে পড়া ভারতীয়রা কীভাবে দেশে ফিরবেন, তা নিয়ে চিন্তায় সৌরভের পরিবার। হুগলির ধনিয়াখালির ভান্ডারহাটির বাড়িতে থাকা স্ত্রী, সাত মাসের মেয়ের নাম অর্না-সহ পরিবারের বাকিদের সঙ্গে নিয়মিত কথা হচ্ছে তাঁর। সৌরভ জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরতে পারছেন না। সাইরেন বাজলেই শেল্টার হোমে ঢুকে পরতে হচ্ছে। জল, খাবার পেতে এখনও সমস্যা হয়নি। ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন তিনি। সৌরভের কথায়, “মাঝে মাঝে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। হামাস জঙ্গিরা যেখানে সেখানে ঢুকে পরে হামলা চালাচ্ছে। সাইরেনের শব্দ পেলেই শেল্টারে ঢুকে পড়তে হচ্ছে।”
উত্তরপাড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় দম্পতি গবেষক। তিন বছরের মেয়ে সিন্ধুরাকে নিয়ে তাঁরা ইজরায়েলের হাইফা শহরে থাকেন। স্নায়ুতন্ত্রের রোগ নিয়ে গবেষণা করছেন সোমোদয় ও জয়িতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাইফা শহরে যুদ্ধের আঁচ এখনও লাগেনি। তবে স্কুল, কলেজ সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সোমোদয়দের বিশ্ববিদ্যালয় খোলা আছে। সেখানে গবেষণার কাজ চলছে। সোমোদয় ভিডিও কলে জানান,সাইরেন বাজলে বাঙ্কারে ঢুকে যেতে বলা হয়েছে। ৭২ ঘন্টার জন্য জল, খাবার, পোশাক মজুত করে রাখতে বলা হয়েছে।
সব শুনে পরিবারের একটাই আর্জি, ইজরায়েলে যারা আটকে আছে, তাঁদের দ্রুত বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করুক ভারত সরকার। পুজোর আগে ঘরে ফিরে আসুক ছেলেমেয়েরা।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.