সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: লোকালয় থেকে জঙ্গলে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ফের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল তিন দাঁতালের৷ মঙ্গলবার রাতে ঝাড়গ্রামে বিনপুরে মালাবতী জঙ্গল থেকে একটি হাতির দলকে বেলপাহাড়ির দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন বনকর্মীরা৷ দলটিতে শাবক, পূর্ণবয়স্ক মিলিয়ে প্রায় ২০টি হাতি ছিল৷ সাতবাঁকি এলাকার কাছে পৌঁছতেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা৷ শাবকরা নিরাপদে পেরিয়ে যেতে পারলেও, বিদ্যুতের ঝুলন্ত হাইটেনশন তার ছুঁয়ে যায় দাঁতালদের শরীর৷ সাড়ে ১১ হাজার ভোল্টের ধাক্কায় সেখানেই লুটিয়ে পড়ে ৩ গজরাজ৷
সপ্তাহ দুই ধরে ঝাড়গ্রামের সাতধরা জঙ্গল এলাকায় চলছে হাতির তাণ্ডব৷ গ্রামে ঢুকে ধান খেয়ে, বাড়িঘর ভাঙচুর করছে দাঁতালের দল৷ এমনকী স্কুলে ঢুকে মিড ডে মিলের চালও খেয়ে নিচ্ছে বলে প্রায়শই অভিযোগ উঠেছে৷ হাতির তাণ্ডবে তটস্থ সেখানকার মানুষজন৷ এরই মধ্যে আবার দলমা থেকেও নেমে এসেছে আরেকটি দল৷ সন্ধে নামলেই তাই আতঙ্কে কাটছে সাতধরা এবং সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের৷ ফলে নিরাপত্তার স্বার্থে লোকালয় থেকে তাদের নিজেদের আস্তানায় ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বনদপ্তর৷ সাধারণত রাতের দিকেই এই কাজটি হয়ে থাকে৷ সেইমতো মঙ্গলবার রাতে বিনপুর এলাকায় হাতি তাড়ানো অভিযান চলছিল৷ তারই মাঝে এমন দুর্ঘটনায় ফের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখে বনদপ্তরের কর্মীরা৷
বুধবার সকালে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল সাতবাঁকি এলাকায় ছুটে যান বনদপ্তরের আধিকারিকরা৷ তিন-তিনটি পূর্ণবয়স্ক দাঁতালের দেহ ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে চমকে উঠছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও৷ সকাল থেকে সববয়সী মানুষজন ভিড় করেন তাদের দেখতে৷ কেউ কেউ নিথর বন্যপ্রাণীর শুঁড়ে সিঁদুর লেপে, সামনে ফুল রেখে শ্রদ্ধাও জানালেন৷
এর আগেও বনদপ্তরের তরফে এধরনের অভিযান চলাকালীন দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ কখনও রেললাইন পেরোতে গিয়ে, আবার কখনও বৈদ্যুতিক বেড়ায় প্রাণ গিয়েছে বন্যপ্রাণীর৷ এসব নিয়ে গোটা দেশজুড়েই বনাঞ্চলগুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷ হাতির মুক্তাঞ্চলের পরিবেশ যথাযথ রাখতে আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ৷ তা সত্ত্বেও নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে হাতির সেফ করিডর চিহ্নিত এলাকাতেও নির্দিষ্ট সময়ের পর অতিরিক্ত গতিতে ট্রেন ছুটছে, যার বলি হতে হচ্ছে হস্তীবাহিনীকে৷ মঙ্গলবার রাতে বিনপুরে হাতি তাড়ানো অভিযানের সময়ে কেন সতর্ক ছিলেন না কর্তব্যরত বনকর্মীরা, এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ফের সেই প্রশ্নই উঠে গেল৷
ছবি: প্রতিম মৈত্র৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.