স্টাফ রিপোর্টার: একদিকে করোনা (Corona Virus) আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে, উর্ধ্বমুখী মৃত্যুর গ্রাফও। সেই আতঙ্কের পরিবেশে বিষণ্ণতার চাদর চাপাল ৩ দুঃসংবাদ। সোমবার একই দিনে রাজ্যের তিন প্রান্তে তিন চিকিৎসকের প্রাণ কাড়ল করোনা। ঘটনায় শোকস্তব্ধ চিকিৎসক মহল। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে আতঙ্ক।
পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২১৪১ জন। সোমবার নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। শুধু কলকাতাতেই মৃত ১৪ জন। আগের চেয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় অনেকটাই লাগাম পরানো গিয়েছে৷ এদিন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৯০৫ জন। কোভিডের ছোবলে সারা দেশে শতাধিক ডাক্তারেরও মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সেই তালিকায় জুড়ল ব্যারাকপুরের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিশ্বজিৎ মণ্ডল, কোঠারি মেডিক্যাল সেন্টারের কার্ডিওলজিস্ট ডা. তপন সিনহা এবং শ্যামনগরের চিকিৎসক ডা. প্রদীপ ভট্টাচার্যর নাম। তিন জনেরই করোনার চিকিৎসা চলছিল। ভাইরাসের মারণ হানায় এই তিনজন ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন আরও একজন। সোমবারই কলকাতার কনসালট্যান্ট সার্জন হিমাদ্রি সেনগুপ্তও মারা গিয়েছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। সেখানেও পরোক্ষে করোনা আবহে কাজের চাপকেই দায়ী করছেন সহ-চিকিৎসকরা।
এমনিতেই রোগীপিছু চিকিৎসকের অভাব। তার ওপর চার চিকিৎসকের মৃত্যুতে অশনি সংকেত দেখছেন চিকিৎসককুল। চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম’ মনে করছে উপসর্গহীন রোগীর বাড়বাড়ন্ত মৃত্যু ডেকে আনছে স্বাস্থ্যবন্ধুদের। সংগঠনের সম্পাদক ডা. কৌশিক চাকি জানিয়েছেন, “এমন একটা মুহূর্তে আরও বেশি সংখ্যক চিকিৎসকের প্রয়োজন। সেখানে একদিনে চার চিকিৎসকের মৃত্যু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
শহরাঞ্চলে এমন ভূরি ভূরি করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে যাঁদের কোনও উপসর্গ নেই। শুধুমাত্র থার্মাল গানের সাহায্যে তাঁদের দেহের তাপমাত্রা মেপেই চেম্বারে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। উপসর্গহীন এই করোনা রোগীরাই বয়স্ক চিকিৎসকদের মৃত্যুদূত স্বরূপ। অনেক চিকিৎসকের কোমর্বিডিটি রয়েছে। হাই প্রেশার, সুগার নিয়েই তাঁরা রোগী দেখছেন। বুঝতেও পারছেন না অতর্কিতে নিঃশব্দে ছোবল মারছে ভাইরাস। কোভিড টেস্ট করানো ছাড়া এই উপসর্গহীন রোগীদের ধরা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এই মুহূর্তে চিকিৎসকদের মধ্যে করোনা এবং নন করোনা এই ধরনের বিভাজন করতেও বারণ করছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম’। সংগঠনের সম্পাদক ডা. চাকি জানিয়েছেন, কোভিড চিকিৎসক, নন-কোভিড চিকিৎসক এই মাত্রা মুছে ফেলতে হবে। লক্ষ করলে দেখা যাবে চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞরাও মারা যাচ্ছেন করোনায়। তাঁরা তো করোনার চিকিৎসা করছেন না। কিন্তু অসুখ তাঁদেরও ছেড়ে কথা বলছে না। উল্লেখ্য, এমন একটা দিনে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পূর্ব ভারতের কার্ডিয়াক সার্জন দেবী শেঠি। বেসরকারি দুই সংস্থার উদ্যোগে এদিন কোভিড হেলথকেয়ার প্রফেশনাল বা সিএইচপি-র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে হাজির ছিলেন সিনিয়র কার্ডিয়াক সার্জন ডা. দেবী শেঠি। সেখানেই তিনি বলেন, “অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে চেম্বারে আসছেন রোগীরা। চটজলদি রোগীকে দেখার জন্য দৌড়ে যাচ্ছেন চিকিৎসক। কিন্তু মনে রাখতে হবে ওই রোগীর উপসর্গহীন করোনা আক্রান্ত হলে চিকিৎসক ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে চলে যাবেন। এমনিতেই চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। এরপর যদি অগুনতি চিকিৎসক কোয়ারান্টাইনে চলে যান কী হতে পারে সেটা সাধারণ মানুষকে ভাবতে হবে। সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে দেবী শেঠি জানিয়েছেন, মনে রাখবেন অসুখটা মাত্র ছ’মাসের পুরনো। প্রথম রাউন্ডে সরকারি হাসপাতাল যথেষ্ট ভাল কাজ করেছে। এবার দায়িত্ব নিতে হবে বেসরকারি হাসপাতালকে।
বেডের হাহাকার প্রসঙ্গকে উড়িয়ে দিয়ে ডা. শেঠী বলেন, বেড চিকিৎসা করে না। চিকিৎসা করতে গেলে দক্ষ চিকিৎসকের প্রয়োজন। অনেক বেড আছে। কিন্তু ৫০ হাজার ডাক্তারের অভাব আছে। সওয়া এক লক্ষ নার্সের অভাব আছে। তাঁর পরামর্শ, যে সমস্ত চিকিৎসকরা পিজিটি ফাইনাল ইয়ারে পড়ছেন তাদের এবছর পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিক। পরীক্ষা দিয়ে তাঁরা কী শিখবে? তার চেয়ে এই বছরটা তাঁরা করোনা রোগীদের চিকিৎসায় কাজ করুক। যে সমস্ত নার্স বিএসসি ফাইনাল ইয়ার পড়ছে তাঁরাও কাজে নেমে পড়ুক। পরীক্ষা স্রেফ একটা সার্টিফিকেট দেবে। কাজ শেখাবে এই প্র্যাকটিকাল অভিজ্ঞতাই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.