সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: ভোট মানেই চাপা টেনশন। হিংসা বা রিগিং ঘিরে মাথাব্যথা কমিশনের। শাসক-বিরোধীর অভিযোগে জেরবার দশা হয় তাদের। কিন্তু বাংলায় প্রথম দফা নির্বাচনের আগে কমিশনকে ‘ভোট সন্ত্রাসে’র চেয়ে বেশি চাপে রেখেছে অন্য কয়েকটি বিষয়। ভয় ধরাচ্ছে হাতি-চিতাবাঘ-বাইসনেরা। চিন্তা বাড়িয়েছে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাও। কারণ কোথাও নদী পেরিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছতে হবে তো কোথাও আবার ৫ কিলোমিটার পাকদণ্ডি বেয়ে পাহাড়ের চূড়োয় ভোটকেন্দ্রে পৌঁছবেন ভোটকর্মীরা। শুধু ভোট করাতে গেলেই তো হবে না, ইভিএম নিয়ে নিরাপদে ডিসিআরসিতে ফিরতেও তো হবে। পথে যদি বন্যজন্তুর মুখোমুখিও হন তাঁরা, জানানোর উপায় নেই। কারণ পুরোটাই মোবাইল শ্যাডো জোন। ভরসা স্রেফ স্যাটেলাইট ফোন।
রাত পোহালেই কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে ভোটগ্রহণ (2024 Lok Sabha Election)। সন্ত্রাস, রিগিং-য়ের মতো বিষয়গুলিকে ছাপিয়ে গিয়েছে বণ্যপ্রাণীর আক্রমণের চিন্তা। কোচবিহারে এই আতঙ্ক কিছুটা কম। কিন্তু আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে চিন্তা বাড়িয়েছে চিতাবাঘ। বৃহস্পতিবারও আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা ব্লকের দলগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের দলগাঁও চা বাগানের দলমুনি ডিভিশনে খাঁচাবন্দি হয় চিতাবাঘ। কিছুদিন আগে স্থানীয়দের নজরে পড়েছিল চিতাবাঘটি। তার পর এলাকাবাসীর দাবি মেনে বনদপ্তর ওই এলাকায় খাঁচা বসায়। এদিন তা খাঁচাবন্দি হয়। তবু চিন্তা কাটছে না। এলাকায় মাঝেমধ্যেই দেখা মিলছে চিতাবাঘের। জেলাজুড়ে রয়েছে হাতির করিডোর। সম্প্রতি বাইসনও ঢুকছে লোকালয়ে। জলপাইগুড়িতেও একই অবস্থা। ভোটের দিনও এই তিন ‘বাহুবলী’কে নিয়ে চিন্তায় কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের হিসেব বলছে, জেলার বক্সা ও জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের ভিতর ও সংলগ্ন এলাকায় ৩৩টি বুথ রয়েছে। প্রত্যেকটি আবার মোবাইল শ্যাডো অঞ্চলের অন্তর্গত। যেখানে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। যোগাযোগের মাধ্যম শুধুমাত্র আরটিসেট। জলপাইগুড়িতে ৬০টি বুথ রয়েছে বন্য়প্রাণী অধ্য়ুষিত এলাকায়। এর মধ্যে ১৮টি রয়েছে শ্যাডো জোনে। এই সমস্ত এলাকায় আচমকা বাঘ, হাতি বা বাইসন হামলা চালালে কীভাবে মোকাবিলা হবে, তা বেশ ভাবনার। বুথগুলির দায়িত্বে রয়েছেন বনদপ্তরের কর্মীরা। থাকছে হাতিকে তাড়ানোর সার্চ লাইট, ঘুম পাড়ানো গুলিও। তাতেও কি বাগ মানবে ‘বাহুবলীরা, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
কমিশন কর্তাদের কপালের ভাঁজ বাড়িয়েছে তিন জেলার ভৌগোলিক ‘ভোগান্তি’ও। কোচবিহার জেলার দিনহাটার জারিধরলা ও দড়িবশ গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই কেন্দ্র, যেখানে প্রায় ৫ হাজার ভোটার রয়েছে। সেখানে পৌঁছতে ধরলা নদীতে প্রায় দেড় থেকে দু কিলোমিটার পথ পেরতে হয়। নৌকা থেকে নেমে ঘোড়া বা গরুর গাড়িতে বালুচর পার করে পৌঁছতে হয় গ্রামে। পুরোটাই করতে হয় বিএসএফ এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তারক্ষীদের কড়া নজরে। আবার কোচবিহারের তুফানগঞ্জ মহকুমার ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েতে ঝাউকুটি গ্রামের বুথে পৌঁছতে ঘুরপথে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ বেরিয়ে অসম হয়ে পৌঁছতে হয়। ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয়। শুধু কোচবিহার নয়, আলিপুরদুয়ারেও বক্সা পাহাড়ের উপর রয়েছে তিনটি বুথ। যেখানে জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার হেঁটে পাকদণ্ডি পথ হেঁটে পৌঁছতে হয় তিন বুথে। এটাও মোবাইল শ্যাডো জোন। যোগাযোগের মাধ্যম বলতে স্যাটেলাইট ফোন। ভোট মিটিয়ে ভোটকর্মীদের এই পথ ধরে হেঁটেই ফিরতে হবে।
গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো কমিশনের আতঙ্ক বাড়িয়েছে খামখেয়ালি আবহাওয়া। হাওয়া অফিস বলছে, শুক্রবার নির্বাচনের দিন উত্তরবঙ্গের উপরের দিকের ৫ জেলায় ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এই পাঁচ জেলাতেই বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা বৃষ্টি বিক্ষিপ্তভাবে সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝড়ো হাওয়া বইবে।
আর এই পূর্বাভাসেই ঘুম উড়েচে কমিশন কর্তাদের। হিংসা-রিগিং না হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী সামলে নেবে, কিন্তু আবহাওয়া-বন্যপ্রাণ আর ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করা যাবে তো? উত্তর মিলবে শুক্রবার সন্ধেয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.