সৌরভ মাজি, বর্ধমান: তোলাবাজির টাকা না পেয়ে আতঙ্ক ছড়াতে দোকানে বোমাবাজি। ধারাবাহিক এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছিল শহর বর্ধমানে। রবিবার সেই ঘটনার কিনারা করল পুলিশ। মোবাইলের সূত্র ধরে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। ধরা পড়েছে আরও দু’জন। ধৃতদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ তরল মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। ডেরা থেকে উদ্ধার হয়েছে তিনটি তাজা বোমা।
পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন,“তদন্তে নেমে বিভিন্ন সূত্র থেকে ওই তিন দুষ্কৃতীকে চিহ্নিত করা হয়। তাদের গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছিল। রবিবার বর্ধমান শহরে বাইক নিয়ে তারা যখন যাচ্ছিল, সেইসময় তাদের ধরা হয়। নিষিদ্ধ তরল মাদক উদ্ধার হয়েছে তাদের কাছ থেকে। ১৯ আগস্ট প্রথম ঘটনার পরই সাইবার ক্রাইম সেল-সহ বিভিন্ন দপ্তরকে তদন্তে নামানো হয়েছিল।” দুষ্কৃতীরা তোলা চেয়ে হুমকি দিতে মোবাইলের প্রি-অ্যাক্টিভেটেড সিমকার্ড ব্যবহার করেছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ এই কাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড শেখ সাইদুলকে চিহ্নিত করে। তারপরই মেলে সাফল্য।
পুলিশ সূত্রে খবর, শেখ সাইদুলের বাড়ি মেমারি থানার দেবীপুরের দুর্গাডাঙায়। ধৃত বাকি দু’জন, শেখ রবি ও রাজেশ রায়। রবির বাড়িও দুর্গাডাঙায়। আর রাজেশ বিহারের বেগুসরাইয়ের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, সাইদুলের বিরুদ্ধে ব্যাংক ডাকাতি, পেট্রলপাম্প ডাকাতি-সহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল, আগেও সে গ্রেপ্তার হয়েছে। সেসময় কারাগারে তার সঙ্গে রাজেশের পরিচয় হয়। রাজেশ বোমা ছোঁড়ায় পারদর্শী। তার বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। জামিনে ছাড়া পেয়ে তোলা আদায়ের পরিকল্পনা করে সাইদুল। সেই কাজে রাজেশের সাহায্য নেয়। তাদের সঙ্গী হয় রবিও।
গত ১৯ আগস্ট শহরের খাগড়া মোড় এলাকায় জিটি রোডের উপর একটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকান মালিককে ফোন করে ৫ লক্ষ টাকা তোলা দাবি করে সাইদুলরা। না পেয়ে দোকানে বোমা ছোঁড়া হয় রাতে। কিন্তু তা নিষ্ক্রিয় থাকায় ২৩ আগস্ট একইভাবে ১০ লক্ষ টাকা তোলা চেয়ে শহরের ঢলদিঘি এলাকায় জিটি রোডের উপর রেস্তোরাঁর মালিককে ফোন করেছিল। দাবি না পূরণ না হওয়ায় রাতে সেই দোকানেও বোমা হামলা হয়। এতে দোকানের ৬ কর্মী জখম হন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুটি ঘটনার তদন্তে নেমে যে নম্বর থেকে ফোন করে তোলাবাজির হুমকি দেওয়া হয়েছিল, সেই নম্বরের সূত্র ধরে খোঁজখবর শুরু হয়। হুমকি ও হামলার পর দুষ্কৃতীরা সেই নম্বর আর ব্যবহার করেনি। মোবাইল সেটটিও বদল করে ফেলেছিল। সেই নম্বরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। জানতে পারে, সেগুলি প্রি-অ্যাক্টিভেটেড সিম ছিল। কোন ডিলার বা রিটেলারের মাধ্যমে তা বিক্রি করা হয়েছিল তা জানতে পারে পুলিশ। তারপরই মাস্টারমাইন্ডের হদিশ মেলে। ধীরে ধীরে বাকিদেরও চিহ্নিত করা হয়। শনিবার থেকে তাদের উপর নজরদারি শুরু হয়। রবিবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সোমবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হবে। এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না, আর কাউকে ফোন করে তোলা আদায়ের চেষ্টা করেছিল কি না,ভবিষ্যতে তাদের কী কী পরিকল্পান ছিল, সেসব বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.