পলাশ পাত্র, তেহট: রেজিস্ট্রি ম্যারেজ আগেই হয়েছিল, সামাজিকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল মাঘ মাসে৷ সেইমতো নদিয়ার হোগলবেড়িয়ার হরিপুর মনসাতলার বিশ্বাস ও রাজাপুরের মণ্ডল পরিবারে প্রস্ততিও চলছিল। তার মাঝেই ঘটে গেল অঘটন৷ রবিবারই মেঘনার জঙ্গলের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হল ছেলের নিথর দেহ৷ বাংলাদেশ লাগোয়া নদিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকার দুই পরিবারের মাথায় এখন কালো মেঘের ছায়া।
বছর ছাব্বিশের যুবক অমিয় বিশ্বাসকে খুন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া অনিমেষ মণ্ডল, বাদেশ মণ্ডল, সেলিম শেখকে জেরা করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পুলিশের হাতে উঠে এসেছে। সূত্রের খবর, অনিমেষের সঙ্গে বচসার পর হাতাহাতিতে অমিয় জখম হয়ে জ্ঞান হারানোর পর রাতে মোটরবাইকে তাঁকে মাঝে বসিয়ে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায় অনিমেষ। আর অমিয়র মোটরবাইকটা চালিয়েছিল সেলিম। তারা প্রথমে অমিয়কে নিয়ে যায় রাজাপুর এমএসকে স্কুলের সামনে। সেখানে গিয়ে তারা দেখে, অমিয়র ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে। রাতের অন্ধকার থাকলেও প্রায় আট কিলোমিটার মোটরবাইক চালিয়ে তিনজন মেঘনা পৌঁছে যায়। ওই অন্ধকারে অনিমেষের বাড়ির কাছের এই জঙ্গলে মাটি খুঁড়ে অমিয়কে পুঁতে দেওয়া হয়। প্রকাশ্য রাস্তায় একটি মৃত ছেলেকে নিয়ে যাওয়া হল, অথচ কারও নজরে এলো না কেন? এই প্রশ্নের পাশাপাশি আরও একটি প্রশ্নও উঠছে৷ কীভাবে এত সহজে মাদক পাচ্ছে সীমান্ত এলাকার এই যুবকরা? সীমান্ত অঞ্চলে এত নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেও সহজে মাদক হাতে পাওয়ার ঘটনায় প্রশাসনিক গাফিলতি উঠে আসছে।
তবে শুক্রবার রাতে ঠিক কী হয়েছিল? কাঁদতে কাঁদতে মৃতের স্ত্রী অনসূয়া মণ্ডল বলেন, ‘আমি কলকাতা থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। অমিয় আমাকে করিমপুর থেকে মোটরবাইকে করে বাড়ি নিয়ে আসত। সেইমতো ছ’টার পর ফোনে কথা হয়। ও জানায়, আমি করিমপুরে আসছি। আটটার পর ফোন করতেই ওর ফোন ধরে অনিমেষ। সে বলে, পরে ফোন কর। ও কাস্টমারদের সঙ্গে কথা বলছে। কিছুক্ষণ পরেও ফোন করলে একই কথা বলে অনিমেষ। একটা সময় ওর ফোনটা সুইচ অফ করে দেয়।’ অনসূয়া আরও জানিয়েছেন, অনিমেষ তাঁকে সর্বদাই অমিয়র ব্যাপারে নেতিবাচক কথা বলত৷ তবে কি অনসূয়ার প্রতি অনিমেষের আকর্ষণ ছিল, যা থেকে সে অমিয়-অনসূয়ার সম্পর্কে ভাঙন চাইত? এই প্রশ্নও উঠছে৷
মাঘ মাসে দুজনের বিয়ের সামাজিক অনুষ্ঠান ঠিক হলেও, অমিয় ইদানিং মাদক সেবন করে নিজেকে ক্রমশ গুটিয়ে নিচ্ছিল বলে জানা যাচ্ছে। ছেলে সদ্য হারানো মা শীলা দেবী সোমবার কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমি অনিমেষকেও ছেলের মতোই দেখতাম। আশপাশ থেকে ওর নামে নেশা করা বা বাজে কথা শুনতাম। এজন্য ছেলেকে মিশতে বারণ করেছিলাম। ছেলেটা মিথ্যে কথাও বলত৷’
রবিবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জঙ্গল থেকে মাটি খুঁড়ে দেহ উদ্ধারের এই ঘটনায় পুলিশ কয়েকটি বিষয়ে ধন্দে রয়েছে। অমিয়র মৃত্যুর পর তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে ফোনের কথোপকথনের বিস্তারিত দেখছে পুলিশ। একইসঙ্গে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ওপর তাদের নজর রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.