তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: একের পর এক নির্বাচন পার হয়ে গেলেও চা শ্রমিকদের দিকে ফিরেও তাকায় না কেউ। এমনটাই অভিযোগ দার্জিলিং জেলার বিস্তীর্ণ চা বাগান পরিবেষ্টিত এলাকার মানুষদের। চা বাগানের উপর নির্ভরশীল এই মানুষদের দাবিদাওয়া নিয়ে আশ্বাসের পর আশ্বাস মিললেও আদতে পূরণ হয় না ন্যূনতম চাহিদাও। নিজেদের লোক বলে বারবার তাঁদের দাবি করলেও কোনও নেতা-মন্ত্রী ফিরেও তাকান না তাঁদের দিকে। এমনটাই অভিযোগ বারবার কানে আসে। এই তত্ত্বকে সামনে রেখেই সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এবার বিধানসভার নির্বাচনে (Assembly Election 2021) শ্রমিকদের পরিবারের থেকেই এক যুবতীকে নিজেদের প্রার্থী করেছেন।
নকশালবাড়ি আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত পরিবারের সদস্য দার্জিলিং (Darjeeling) জেলার ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা এলাকার বাসিন্দা সিরিল এক্কার কন্যা সুমন্তী এক্কাকে এবারে প্রার্থী করেছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন। মাত্র ২৬ বছর বয়সী এই ‘তরুণ তুর্কি’ যুবতীকে দিয়েই বাজিমাত করতে চাইছে লিবারেশন। এখনও ক্যামেরার সামনে সড়গড় হয়ে না ওঠা যুবতী সুমন্তী জেতার বিষয়ে আশাবাদী। তাঁর দাবি, নিজেদের লোকেদের মাঝে থেকে তাঁদের মৌলিক অধিকার নিয়ে লড়াই করার জন্যই তিনি নির্বাচনী ময়দানে নেমেছেন। মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্যই বিধায়ক হওয়ার পর কাজ করে যাবেন।
বিখ্যাত নকশালবাড়ি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন সুমন্তীর ঠাকুরদা বধুয়া এক্কা। দিনের পর দিন চারু মজুমদার-সহ একাধিক নকশাল নেতাদের সঙ্গে মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন তিনি। পুলিশের গুলিতে কোনওমতে প্রাণ বেঁচে ছিল তাঁর। তবুও আন্দোলনের পথ থেকে পিছু হটেননি। জমিদার জোতদারদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অধিকার নিয়ে লড়াই করে চলেছেন সুমন্তীর ঠাকুরদা। তাঁর দেখানো পথে গিয়েছিলেন ছেলেও (সুমন্তীর বাবা)। নকশালবাড়ি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই পরিবারের রক্তে মানুষের জন্য লড়াই করার বীজ রয়েছে।
মাত্র ১২ বছর বয়সে সুমন্তী প্রথমবার সিপিআই(এমএল) লিবারেশন দলীয় কর্মসূচিতে বাবার হাত ধরে শিলিগুড়ি গিয়েছিলেন। তখন থেকেই কাল মার্কস, লেনিন, ভগৎ সিংয়ের ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়ির কাছেই চায়ের কারখানায় কাজ করেন তিনি। লকডাউনের হাজারো সমস্যার মাঝে চা শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে মাঝেমধ্যেই গর্জে উঠতে দেখা যায় তাঁকে। সিপিআই (এমএল) লিবারেশন রাজনৈতিক আদর্শকে মাথায় রেখেই লড়াই করেছেন তিনি। দিনের পর দিন চা শ্রমিকদের যেভাবে কষ্ট করে দিন গুজরান করতে হয়, তা বিচক্ষণ জানেন সুমন্তী। তাই কাছের মানুষ হয়ে নিজেদের দাবি দাওয়া পুরণ করার লক্ষ্যে লড়াই করাটাই মূল লক্ষ্য তাঁর। সুমন্তীর বাবাও আশাবাদী যে মেয়ে যদি জিতে বিধায়ক হতে পারেন, তবে আগামীতে মানুষের জন্যই কাজ করবেন তিনি।
শারীরিকভাবে সমস্যা থাকায় মেয়ের পাশে গিয়ে প্রচার হয়তো তিনি বাড়ি বাড়ি করতে পারবেন না। তবে দু’হাত ভরে মেয়েকে আশীর্বাদ অবশ্যই করবেন। সুমন্তীর এই মুহূর্তের প্রতিপক্ষ হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসের পোড়খাওয়া নেতা ছোটন কিস্কু রয়েছেন। বর্তমানে ওই এলাকায় বিধায়ক হিসেবে কংগ্রেসের সুনীল তিরকে যদি প্রার্থী হন, তবেও তিনিও বড় বাধা হয়ে উঠতে পারেন। তবে কোনও কিছুকেই পরোয়া করেন না সুমন্তী। প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন, মানুষের অধিকার নিয়ে লড়াই করার ক্ষমতা যে তাঁর আছে, তা তিনি স্পষ্ট বলে দেন।
সুমন্তী বলেন, “চা শ্রমিকদের মৌলিক দাবি দাওয়া নিয়েই আমি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রচার করব। তাদের জন্য কাজ করাটাই আমার মূল লক্ষ্য হবে। এছাড়াও দেশজুড়ে যেভাবে কৃষি আন্দোলন চলছে, তার জেরে কেন্দ্র রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমার হাত শক্ত করতে মানুষের আশীর্বাদ চাই।” সিরিলবাবু বলেন, “আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনও চাওয়া পাওয়া নেই। মেয়ে বিধায়ক হয়ে মানুষের জন্য কাজ করুক সেটাই চাই। বিধায়ক হলে তাকে মানুষের জন্য কাজ করতেই হবে।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.