নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুর: ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত। তারপরেও লুট হয়ে যাওয়া ব্যালট বাক্সের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না মুর্শিদাবাদে। জেলার বিভিন্ন ব্লকে লুট হওয়া ২৬টি ব্যালট বাক্সের এখনও কোনও খোঁজ নেই। চিরুনি তল্লাশি চালিয়েও উদ্ধার করা যাচ্ছে না ব্যালট বাক্স। তবে কয়েকটি ব্যালট বাক্স উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে ব্যালট বাক্স লুট নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। শাসক দলের দুষ্কৃতীরাই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম। অন্যদিকে তৃণমূলের অভিযোগ, ব্যালট বাক্সগুলি বিরোধীদের বাড়িতেই আছে। পুলিশ খুঁজলেই পাওয়া যাবে।
গত ১৪ মে ভোট গ্রহণ হয়। ওইদিন জেলার বিভিন্ন ব্লকে ব্যালট বাক্স লুট করে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। পুকুরে ফেলে দেওয়া, জল ঢেলে দেওয়া, ছাপ্পা মারা ব্যালট বাক্স উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু যে সমস্ত ব্যালট বাক্স বুথ থেকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে দুষ্কৃতীরা, সেই সমস্ত ব্যালট বাক্স উদ্ধার করা যায়নি। ভোটের দিন কান্দি মহকুমার ভরতপুর, জঙ্গিপুর মহকুমার ফরাক্কায় এবং বহরমপুর মহকুমার দৌলতাবাদ, রেজিনগর ও নওদা এলাকায় প্রচুর ব্যালট বাক্স লুট হয়। ওই ব্যালট বাক্সগুলি ছিনতাই করতে গিয়ে দুষ্কৃতীরা বোমা ফাটায়, গুলি চালায়। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বুথগুলিতে পুনর্নির্বাচন হলেও লুঠ হওয়া ব্যালট বাক্স এখনও উদ্ধার হয়নি।
[ প্রথমবারেই বাজিমাত, জেলা পরিষদে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জয়ী রানাঘাটের গৃহবধূ ]
ভোটের দিন ভরতপুরে দু’টি, ফরাক্কায় ছ’টি, রেজিনগরে ন’টি এবং নওদা ব্লকের বিভিন্ন বুথ থেকে ন’টি ব্যালট বাক্স লুট হয়ে যায়। পুলিশ তল্লাশি করেও ওইসব ব্যালট বাক্স উদ্ধার করতে পারেনি। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে ওই ২৬টি ব্যালট বাক্স গোপন ডেরায় রেখেছে দুষ্কৃতীরা। আবার বক্সের রং পালটে বাড়ির কাজে লাগানোর কথা উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। তাছাড়া ব্যালট বাক্সগুলিতে ভারী কিছু ভরে গঙ্গা পদ্মা নদীতেও ফেলে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার শ্রী মুকেশ জানিয়েছেন, “হারিয়ে যাওয়া ব্যালটবাক্সগুলির মধ্যে কিছু খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। খুব শীঘ্রই সেগুলি উদ্ধার করা হবে।” এদিকে রাজ্যে ভোট উপলক্ষে ভিন রাজ্য থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল প্রচুর ব্যালট বাক্স। সেই ব্যালট বাক্সগুলি ফেরত দিতে না পারলে তার দাম চুকাতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। সেই কারণে জেলা পুলিশের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে হারিয়ে যাওয়া ব্যালট বাক্স উদ্ধার।
[ গণনায় কারচুপির অভিযোগে পঞ্চায়েত অফিসে তালা দিল বিজেপি ]
এই বিষয়ে বিজেপি জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ জানান, “পুলিশের ব্যর্থতায় এই লুট হয়েছে। যে সমস্ত জায়গায় শাসক দল পরাজয় মনে করেছিল সেই সব জায়গায় ব্যালট বাক্স লুট করেছে শাসক দলের দুষ্কৃতীরা। শান্তিপূর্ণ ভোট যে হয়নি তার প্রমাণ ব্যালট বাক্সের লুটের ঘটনা।” অন্যদিকে নওদা বিধানসভার কংগ্রেস বিধায়ক আবু তাহের খান জানান, “শাসক দল বিরোধীদের ভোট করতে দেয়নি। যেখানে জিততে পারবে না বুঝেছে সেখানে শাসক দল ব্যালট বাক্স লুট করেছে। এই ব্যালট বাক্স গুন্ডাদের কাছেই রয়েছে।” অন্যদিকে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য জানান, “শাসক দলের দুষ্কৃতী বাহিনী ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে জেলাকে বিরোধী শূন্য করতে চেয়েছিল। গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে শাসক দল। তাদের জেরা করলেই মিলবে ব্যালট বাক্স।” তবে জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি অশোক দাস জানান, “কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি আশ্রিত গুন্ডারা তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে ব্যালট বাক্স লুট করেছে। তৃণমূলের কর্মীদের উপরে গুলি চালিয়েছে, বোমা ছুড়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.