চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: ২১ জুলাই, বুধবার প্রথমবার কলকাতা যাচ্ছি ট্রেনে চেপে। সঙ্গে রয়েছেন বিকাশদা। বিকাশদা তখন ধর্মতলায় বড় কোম্পানিতে চাকরি করেন, বড় আধিকারিক। সপ্তাহে পাঁচদিন কলকাতাতেই থাকেন। আর দুদিন আসেন গ্রামে। সক্রিয় কংগ্রেস কর্মী। মিঠানি, আলডি, পাটমোহনা, বেজডি, মিঠানি কোলিয়ারি থেকে ৭০ জন যুব কংগ্রেসের কর্মী তখন কলকাতামুখী। পথ প্রদর্শক বিকাশ মুখোপাধ্যায়। কারও বয়স ১৯ বা কারোর ২০। সবাই তখন যুবক, তাজা ঘোড়া। মলয় ঘটক তখন বর্ধমান যুব কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক।
স্বচ্ছ ভোটদানের অধিকার-সহ বামেদের অত্যাচারে বিরুদ্ধে যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযান কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন যুব নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের একমাত্র প্রতিবাদী মুখ তিনি। হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে মিছিল করে পৌঁছালাম ধর্মতলায়। তারপরেই হঠাৎ করেই পুলিশের আক্রমণ। ফাটলো কাঁদানে সেল। ছুটল গুলি। গ্রাম থেকে শহরে যাওয়া যুবকরা তখন বিভ্রান্ত। কোথায় যাবো? কোন দিকে যাব? যতই ছুটছি মনে হচ্ছে যেন পিছন থেকে গুলি ধেয়ে আসছে। এই বুঝি বুলেট লাগলো পিঠে। মনে পড়ে গেল বিকাশদা কেসি দাসের মিষ্টির দোকানের কাছে তাঁর অফিসটি দেখিয়েছিলেন। সেদিকে ছুটতেই দেখি তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। আমার মতো অনেককেই আগলে রেখেছেন। সবাইকে নিয়ে বিকাশদা ছুটলেন টাওয়ার হাউস বিল্ডিংয়ে। সিকিউরিটিকে দিয়ে কলাপসিবল গেট খুলিয়ে এক এক করে গ্রামের ছেলেদের তিনি ঢুকিয়ে দেন ভিতরে।
বাইরে তখন গুলির আওয়াজ। চোখ জ্বালা করছে। ভাগ্যিস সেদিন বিকাশদা ছিলেন। তাই এতগুলো তাজা প্রাণ বেঁচে গিয়েছিল তাঁর জন্য। ….২১ জুলাই, শহিদ স্মরণে। ধর্মতলা চলোর ডাক দেওয়ার কর্মসূচির সভায় কোলিয়ারি এলাকায় এই গল্প শোনা যাচ্ছে আজকের নেতাদের মুখে। ছোট ছোট সভায়, স্ট্রিট কর্ণার সর্বত্র সেদিনের ভয়াবহ ইতিহাসের গল্প বলছেন আজকের প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল নেতারা। মন দিয়ে শুনছেন আজকের তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র-যুবরা।তৃণমূল কংগ্রেসের এসসিএসটি সেলের জেলা সভাপতি মোহন ধীবরের মতে, এই গল্প আজকের প্রজন্মের জানা দরকার। শুধু ধর্মতলা গিয়ে ভিড় বাড়ালেই হবে না। আজ থেকে ২৫ বছর আগে কী ঘটেছিল সেদিন? জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কেমন ছিল পুলিশ? এসবই জানা দরকার৷
একই পরিবারের চারজন সেদিন মহাকরণ অভিযানে গিয়েছিলেন। বাবা অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়, তিন ছেলে নান্তু, মান্তু ও পার্থ। তাঁরাও গিয়েছিলেন।কর্মসূত্রে এখন দুর্গাপুরে থাকেন বনমালি বন্দ্যোপাধ্যায়। বনমালি বলেন, ‘‘সেদিন বিকাশদা না থাকলে আমরা সবাই মারা পড়তাম। আমরা সবাই ছিলাম আনকোড়া। কলকাতার অলিগলি না জেনে ভুল পথ ঢুকে বেঘোরে প্রাণটা যেত। সেই অভিশপ্ত দিনটা কোনও দিন ভুলবো না।’’
[মঞ্চ ভেঙে পড়বে না তো? মোদির সভায় দুর্ঘটনার জেরে প্রশ্ন ‘সাবধানী’ মমতার]
বিকাশ মুখোপাধ্যায় এখন গ্রামে থাকেন। চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী। বিকাশবাবু বলেন, ‘‘১৯৯৩-র ২১ জুলাই ষড়যন্ত্র করেই এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল।’’ সেই দিনে ওই কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়েছিলেন ১৩ জন কংগ্রেস কর্মী। তবে কোলিয়ারি এলাকার মানুষ একথায় আজও মানেন সেদিন যদি বিকাশদা না থাকত তবে শহিদের সংখ্যা ৩০ জন ছাড়িয়ে যেত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.