সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: নজরে ৩৫ শতাংশ কুড়মি ভোট! আর তাই পুরুলিয়া কেন্দ্রে ৭ মাহাতোর লড়াই। তাহলে কি জাতপাতের রাজনীতি? ফি লোকসভা ভোটে (2024 Lok Sabha Polls) পুরুলিয়া কেন্দ্রে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের নামের পাশে ‘মাহাতো’ থাকায় এই প্রশ্ন উঠে আসে। আর এবার কুড়মি জনজাতিদের জাতিসত্তার আন্দোলনের আবহে ৭ জন মাহাতো প্রার্থী থাকায় রাজনৈতিক মহলে জাতপাতের জল্পনা ক্রমেই বাড়ছে। যদি তা মানতে চায়নি কোন রাজনৈতিক দল। আর এই রাজনৈতিক দলগুলিকে পাল্টা দিয়েছে এবারই প্রথম সরাসরি ভোটের ময়দানে অবতীর্ণ হওয়া আদিবাসী কুড়মি (Kurmi) সমাজ। তাদের কথায়, মাহাতো জনপ্রতিনিধি হয়েও কুড়মিদের জাতিসত্তার আন্দোলনে কোন ভূমিকাই তারা নিচ্ছেন না। কুড়মি মন জয় করতে রাজনৈতিক দলগুলি মাহাতো প্রার্থী দিলেও ওই ভোট যাবে এবার আদিবাসী কুড়মি সমাজের ছত্রছায়াতেই।
এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী বিদায়ী সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো (Jyotirmoy Sing Mahato), তৃণমূলের শান্তিরাম মাহাতো, কংগ্রেসের নেপাল মাহাতো, বামফ্রন্ট ঘোষণা না করলেও ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী ধীরেন্দ্রনাথ মাহাতো, পুরুলিয়া (Purulia) লোকসভা আসনে এই প্রথম এসইউসিআই-এর মাহাতো প্রার্থী সুস্মিতা মাহাতো, বহুজন মুক্তি পার্টির বামসেফ সমর্থিত অনিতা মাহাতো । ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে উপনির্বাচন মিলিয়ে একবার বাদ দিয়ে এই কেন্দ্রে ১৭ বার সাংসদ হয়েছেন মাহাতো জনজাতি থেকেই। তা লোকসেবক সংঘ থেকে বিজেপি। এই কেন্দ্রে সাংসদের কুরসিতে বসেছেন মাহাতোরা-ই। ব্যতিক্রম শুধু ১৯৫৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে। ওইবার পুরুলিয়া কেন্দ্রের সাংসদ হন
লোকসেবক সংঘের বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত। কংগ্রেসের ক্ষুদিরাম মাহাতো। লোকসেবক সংঘের সচিব সুশীল মাহাতো বলেন, “মাহাতো জনজাতি ছাড়াও আমাদের প্রার্থী ছিল।”
আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা ( প্রধান নেতা) তথা পুরুলিয়া কেন্দ্রে কুড়মিদের প্রার্থী
অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ” আমাদের জাতিসত্তার আন্দোলনে মাহাতো সাংসদরা কোনরকম কোন সাহায্য করেননি। আমাদের দাবি পূরণে তাদের কোনো রকম কোনো পদক্ষেপ নেই। এর জবাব দিতেই লোকসভা ভোটে আমরা অবতীর্ণ হয়েছি। আমাদের দাবি আদায় নিজেদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হবে।” এই মাহাতো জনজাতি ওবিসি (OBC) ‘বি’ তে রয়েছে। তৃণমূল থেকে বিজেপি তাঁরা কয়েক বছর ধরেই পুরুলিয়া কেন্দ্রে মাহাতোকেই প্রার্থী করে আসছেন। কিন্তু বিদায়ী সাংসদ তথা পুরুলিয়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো জানান, ” আমি সকলের ভোটে সাংসদ হয়েছি। এবারও পুরুলিয়ার সর্বস্তরের মানুষ নরেন্দ্র মোদিকে ভোট দেবেন।”
জাতপাতের রাজনীতির বিষয়টি একেবারেই মানতে চাননি পুরুলিয়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতো। তাঁর কথায়, “সকলকে নিয়ে আমাদের দল। ভারতবর্ষ যেমন বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। আমাদের দলের ভাবনা, নীতি সেই রকম।”
এবারই প্রথম SUCI (কমিউনিস্ট ) মাহাতো জনজাতি থেকে প্রার্থী করেছে। এসইউসিআই (কমিউনিস্ট)-র জেলা সম্পাদক অসিত ভট্টাচার্য বলেন, “এর পিছনে অন্য কোন কারণ নেই। সাধারণভাবেই পুরুলিয়া কেন্দ্রে আমাদের মাহাতো প্রার্থী।” ১৯৭৭ সাল থেকে এই আসনে প্রার্থী দিয়ে আসছে ওই বামপন্থী দল। কিন্তু এবারই প্রথম তারা কুড়মি জনজাতির থেকে বা মাহাতো প্রার্থী করায় রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
এই কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশিবার সাংসদ রয়েছে ফরওয়ার্ড ব্লকের। মোট ১১ বার। প্রত্যেকবার-ই মাহাতো।
ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অসীম সিনহা বলেন, “পুরুলিয়া কেন্দ্রে কুড়মি ভোটের আধিক্য রয়েছে ঠিকই। কিন্তু প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কখনওই আমরা জাতপাতের বিষয়টি দেখি না। “
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.