সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ছাত্র জীবন থেকে বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বরাবর নেপথ্যে থেকে দল, সংগঠনের কাজ করতেই অভ্যস্ত। এবার তাঁকেই ভোট ময়দানে একেবারে সম্মুখ সমরে নামিয়েছে সিপিএম (CPM)। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে (2024 Lok Sabha Polls) বর্ধমান-দুর্গাপুর থেকে লাল পার্টির প্রার্থী নবাগত ডঃ সুকৃতী ঘোষাল। নাম ঘোষণার পর থেকেই চৈত্রের খর রোদ মাথায় নিয়ে কাস্তে-হাতুড়ি-তারা চিহ্নিত লাল টুপি মাথায় দিয়ে জোরকদমে প্রচারে নেমে পড়েছেন সুকৃতী ঘোষাল। বছর চার আগে তৃণমূল (TMC) সরকারের দেওয়া ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান গ্রহণ করলেও রাজনীতির যুদ্ধ হবে সরাসরিই। সাফ তা জানিয়ে কোনও রকম বিতর্ক হেলায় উড়িয়ে দিলেন সিপিএম প্রার্থী। বললেন, ”শিক্ষারত্ন সম্মান পেয়ে তো আমার হাত বা পালক গজায়নি। উল্লসিতও নই। ওটা তাঁদের বিবেচনা। আমি প্রত্যাখ্যান করিনি।”
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় (Burdwan University) থেকে ইংরাজিতে স্নাতকোত্তর, পিএইচডি শেষ করার পর হুগলির রবীন্দ্র মহাবিদ্যালয়, হাওড়া বিজয়কৃষ্ণ গার্লস কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। ২০০২ থেকে ২০২০ সাল – এই ১৮ বছর বর্ধমান শহরে মহারাজাধিরাজ উদয়চাঁদ মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছে ডঃ সুকৃতী ঘোষাল। ২০২০ সালে ওই পদ থেকে স্বেচ্ছাবসর গ্রহণ করেন। সেবারই তাঁকে ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মানে ভূষিত করে রাজ্য সরকার। তার পর কিছুদিন রি-এমপ্লয়মেন্ট স্কিমের অধীনে হাওড়ায় নবগঠিত হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার হিসেবে কাজ করে বর্তমানে পুরোপুরি অবসরপ্রাপ্ত। সিপিএমের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে দল বহু পরিচিত মুখ। আর এবার সরাসরি দিল্লির লড়াইয়ে শিক্ষক কমরেড। আর তাতেই তিনি বললেন, ”দেখুন, শিক্ষারত্ন সম্মান আমাকে যাঁরা দিয়েছিলেন, তাঁরা মনে করেছিলেন যে আমি তার যোগ্য। আমিও প্রত্যাখ্যান করিনি। কারণ, তাঁদের বিবেচনাকে সম্মান জানিয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষারত্ন পেয়ে তো আমার হাত বা পালক গজায়নি। উল্লসিতও নই। এখন সামনে থেকে রাজনীতির লড়াইটা লড়তে হবে। আমাদের যে কর্মী, সমর্থকরা আমাদের জন্য সারাবছর পরিশ্রম করেন, তাঁদের হয়েই মূল লড়াই।”
একদা লাল পার্টির গড় বর্ধমানেও এখন সেই রং ফিকে গোটা রাজ্যের মতো। জনসমর্থন বা ভোটব্যাঙ্ক – রক্তক্ষরণ অব্যাহত। এই পরিস্থিতিতে নিঃসন্দেহে লড়াই কঠিন। প্রচারে কোন বিষয়টি তুলে ধরে মানুষের কাছে পৌঁছবেন? এই প্রশ্নের জবাবে সুকৃতী ঘোষাল বললেন বামেদের চেনা পরিচিত ‘চেতনা’ ফেরানোর কথা। তাঁর বক্তব্য, বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যে নীতি নিয়েছে, তাতে বিপদ অনিবার্য। শুধু সেসব নীতির প্রতিবাদই নয়, বিকল্প রাজনীতির পথ দেখিয়ে তাঁদের চেতনা জাগানোর কথা বললেন সুকৃতী ঘোষাল। তৃণমূলের তারকা প্রার্থী কীর্তি আজাদ তাঁর প্রতিপক্ষ। গেরুয়া শিবিরের সৈনিক অবশ্য এখনও জানা নেই। ফলে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে (Bardhaman-Durgapur) কাস্তে-হাতুড়ি-তারা দিয়ে চেতনার জাগরণ ঘটাতে কতটা সক্ষম হন সিপিএম প্রার্থী, তা বুঝতে ৪ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.