ফাইল ছবি।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: নিজেদের নীতি থেকে সরে এসে আদিবাসী তালিকাভুক্তের দাবি আদায়ে এবার সরাসরি ভোটে লড়তে চলেছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। পুরুলিয়া (Purulia) শহরের উপকণ্ঠে ছররায় গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া তিনদিনের মহাজড়ুয়াহী কর্মসূচিতে বৈঠকের মধ্য দিয়ে তারা লোকসভা নির্বাচনে (2024 Lok Sabha Polls) লড়ার সিদ্ধান্ত নিল। রবিবার বিকালে প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে আলাদা লড়াইয়ের কথা জানান আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো।
রাজ্যের জঙ্গলমহলের চারটি আসনে প্রার্থী দেবে আদিবাসী কুড়মি (Kurmi) সমাজ। এছাড়া ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) একাধিক আসনে লড়বে তারা। তবে ওড়িশায় লোকসভা নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আদিবাসী কুড়মি সমাজ জানিয়েছিল, তারা সরাসরি ভোটের ময়দানে লড়বে না। তাঁরা সামাজিক সংগঠন হিসাবেই কাজ করবেন। কিন্তু শেষমেশ তাঁরা নির্বাচনী লড়াইয়ের পথেই হাঁটল। যদিও গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলের চার জেলায় কুড়মি ও তার সহযোগী জনজাতি নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করেছিল আদিবাসী কুড়মি সমাজ-সহ একাধিক কুড়মি সংগঠন। নিজেদের দাবি আদায়ে আবার চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রেল টেকা বা রেল অবরোধের (Rail Block) কর্মসূচি পালন করবে। এই বিষয়টিও এদিন প্রকাশ্য সমাবেশের মঞ্চ থেকে জানানো হয়। সমাবেশস্থল লাগোয়া ছররা স্টেশন থাকায় বিপুল জমায়েতের জেরে দক্ষিণ পূর্ব রেলের আদ্রা-চান্ডিল শাখায় এদিন বিকালে বেশ কিছুক্ষণ ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
আদিবাসী কুড়মি সমাজ জানিয়েছে, জঙ্গলমহলের চারটি লোকসভা আসন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুরে তারা প্রার্থী দেবে। প্রার্থী দেবেন ঝাড়খণ্ডের রাঁচি, জামশেদপুর, ধানবাদ, গিরিডি, হাজারিবাগে। সেই সঙ্গে পশ্চিম সিংভূমে আদিবাসী কুড়মি সমাজ সমর্থিত সহযোগী সংগঠন অর্থাৎ ‘হরমিতান’-র কাউকে আসন ছাড়বেন। তিনদিনের ‘ঐতিহাসিক কুড়মালি জিয়াউ মহাজড়ুয়াহি’তে বাংলা, ঝাড়খণ্ড মিলিয়ে একাধিক কুড়মি সংগঠন শামিল হয়েছিলেন। এদিন আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “আমাদের দাবি পূরণে কোন রাজনৈতিক দল কোন কিছু করেনি। তাই দাবি পূরণের কারণেই আমরা লোকসভা ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই সঙ্গে যে আন্দোলন কর্মসূচি চলছে তা চলবে। লোকসভা নির্বাচনে লড়াইটাও আমাদের আন্দোলনের অন্যতম অঙ্গ। আমরা বাংলা, ঝাড়খণ্ডে প্রার্থী দিচ্ছি। ওড়িশায় আমরা নির্বাচন বয়কট করব।” কিন্তু কেন এই বয়কট?
সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, আসনগুলি সাধারণের জন্য সংরক্ষিত নয়। আদিবাসী কুড়মি সমাজ জানিয়েছে, জঙ্গলমহলের যে চার কেন্দ্রে তাঁরা লড়বেন সেখানে কুড়মি জনজাতির কোন প্রার্থী হলে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে তাঁরা অনুরোধ করবেন প্রার্থী পদ প্রত্যাহারের। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারা যেভাবে ‘কুটুম-কুটমালি’ কর্মসূচি নিয়েছিলেন এবারও সেই কর্মসূচি তাঁরা রাখছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
তিনদিনের এই কর্মসূচিতে রাজ্যের ক্রেতা ও সুরক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো, পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো, পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো, পুরুলিয়ার জয়পুরের বিজেপি বিধায়ক নরহরি মাহাতো এই মহাজড়ুয়াহীতে এসেছিলেন। জনপ্রতিনিধিরা এই কর্মসূচিতে এলেও তাঁদের দাবির বিষয় নিয়ে তারা কোনও দিশা দেখাতে পারেননি বলে আদিবাসী কুড়মি সমাজ জানিয়েছে।
এদিন কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি রাজেশ মাহাতোর বক্তব্য, “আমাদের এতদিন বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। এর জবাব কে দেবে? দাবি পূরণে লড়াই নয়। এবারে মরার জন্য প্রস্তুত থাকুন। না মরলে দাবি পূরণ হবে না। আমাদের দাবি পূরণে আমাদের জনজাতির কোনও সাংসদ, বিধায়ক একটা কোনও কাজ করেননি।” লোকসভা ভোটের আগে কুড়মি সমাজের এই কর্মসূচি শক্তি প্রদর্শনেরও ছিল। সেই শক্তি প্রদর্শনে জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাবেশ স্থল ছড়রার পরিত্যক্ত বিমানবন্দর এলাকা এদিন বিকালে ছিল শুধুই কালো মাথার সারি। সেই সঙ্গে হলুদ পতাকায় ছয়লাপ। বাংলা ছাড়াও ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা থেকেও কুড়মি জনজাতির মানুষজন এই মহাজুড়ুয়াহী কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.