সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সিপিএম পুরুলিয়া (Purulia) আসনে কংগ্রেসকে সমর্থন করায় পুরুলিয়া ফরওয়ার্ড ব্লকের মধ্যে দাবি উঠে গিয়েছে, বামফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে আসার। সামাজিক মাধ্যম থেকে হোয়াটস্যাপে ঘুরছে এই দাবি থেকে নানান প্রশ্ন। ফরওয়ার্ড ব্লকের (Forward Block) পুরুলিয়া জেলা কমিটি গত শনিবার পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস কার্যালয়ে সিপিএম-কংগ্রেসের সাংবাদিক সম্মেলনের ছবি সমেত ওই পোস্টে লিখেছে, “একদিন যারা দেওয়ালে লিখেছিলেন – এই হাত শোষকের হাত, এই হাত রক্ত মাখা হাত। সেই হাতে কি বামপন্থী নেতা-কর্মীরা ভোট দিতে পারবেন?”
ওই পোস্টেই সিপিএমকে তাঁরা কটাক্ষ করে লিখেছেন, “এতদিন বামফ্রন্টের সাংবাদিক সম্মেলন হতো সিপিআইএম অফিসে। আজ পুরুলিয়ায় দেখা গেলো নতুন প্রেমে মুগ্ধ হয়ে কংগ্রেস অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন সিপিআইএম নেতা।” ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অসীম সিনহা বলেন, “কংগ্রেস (Congress)অফিসে গিয়ে বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রেস কনফারেন্স করছেন। এটা বামফ্রন্টের লজ্জা। সিপিএম-র অবস্থা যে কোথায় দাঁড়িয়েছে সেটা আরও একবার প্রমান হয়ে গেলো।আমরা সিপিএমকে ছাড়াই লড়াই করে দেখিয়ে দেব।”
সোমবার পুরুলিয়া জেলা বামফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হলেও ওই বৈঠকে ফরওয়ার্ড ব্লক যাবে না বলে জেলা বামফ্রন্টকে (Left Front) জানিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ‘কংগ্রেসকে নিয়ে বামফ্রন্ট করুন।’ এমন মন্তব্যও করেছে পুরুলিয়া জেলা ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতারা। পুরুলিয়া জেলা ফরওয়ার্ড ব্লকের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়েছে, “যদি শরিক বিহীন হয় বামফ্রন্ট। কংগ্রেস থাকে মাঝে, বামপন্থা আর মতাদর্শ লাগবে কিসের কাজে?” হিন্দিতেও হয়েছে পোস্ট, “আপনা হিসসা মাঙ কর দেখো। সারে রিস্তে বেনকাব হো জায়েঙ্গে, অর অপনা হিসসা ইচ্ছা ছোড় কর দেখো সারে কাটে ভি গুলাব হো জায়েঙ্গে…হামে গুলাব নেহি ইনকিলাব চাহিয়ে।”
পুরুলিয়া জেলা ফরওয়ার্ড ব্লকের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাবলু চট্টোপাধ্যায় শনিবারই তাঁর ফেসবুকে লেখেন, ফরওয়ার্ড ব্লকের আত্মমর্যাদা, সুভাষবাদের নীতি ও আদর্শকে রক্ষা করতে হলে বামফ্রট থেকে বেরিয়ে এসে পশ্চিম বাংলার সমস্ত জায়গায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। এতে বাংলার মানুষের কাছে এই দলের সম্মান বেড়ে যাবে। দলের ওই নেতা রাজ্যের সাধারণ সম্পাদককে চিঠিও লেখেন। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “এই সিপিএমের বর্তমানে বামপন্থার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। তারা করে খাওয়ার জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাল। আমার প্রশ্ন, সেখানে নয় আমি অত্যন্ত বেদনাহত যে কারণে রাজ্য বামফ্রন্টের মিটিংয়ে আপনাকে পাশে বসিয়ে পুরুলিয়ার আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র পুরুলিয়া জেলা সিপিএমের পক্ষ থেকে সোশাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু হয়ে যায়। এর বিরুদ্ধে রাজ্য পার্টির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ হলো না কেন? তাহলে কি ধরে নিতে হবে বামফ্রন্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফরওয়ার্ড ব্লক দুটি আসন পেয়েছে। আর পুরুলিয়া কি ছাগলের তৃতীয় সন্তান? রাজ্য পার্টির এই দ্বিচারিতা কেন? প্রবাদপ্রতিম পার্টি নেতৃত্বের আত্মাকে অসম্মান জানানো কেন? কিসের ভয় যদি রাজ্য পার্টির সদিচ্ছা থাকে অবিলম্বে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে বামফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে এসে রাজ্যে সর্বত্র আসনগুলিতে প্রার্থী দেওয়া ঘোষণা করা উচিত।”
ওই চিঠিতে অশোক ঘোষের কথাও উল্লেখ করেছেন ওই বর্ষীয়ান ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা। লিখেছেন, এই পুরুলিয়া জেলা অশোক ঘোষের জেলা। এই জেলা নেতাজির অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হওয়ার জেলা। বামপন্থী আন্দোলনের পুরোধা কমরেড অশোক ঘোষের দেহ শায়িত আছে এই জেলায়। কমরেড অশোক ঘোষের নেতৃত্বে ৭১ সাল থেকে লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করে আসছে পুরুলিয়া।” তিনি লিখেছেন, পুরুলিয়া জেলার ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মীদের আবেগকে মর্যাদা দেওয়া উচিত। সমগ্র রাজ্যে বামফ্রন্ট। আর সিপিএমকে সন্তুষ্ট করার জন্য এ জেলায় একলা চলো, তা হতে পারে না। পুরুলিয়া আসনে কংগ্রেসকে সিপিএমের সমর্থন করা ২৪ ঘন্টা পার হওয়ার পর ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য কমিটি কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়াতেই ক্ষোভে ফুঁসছে পুরুলিয়া জেলা ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা-কর্মী থেকে সমর্থকরাও। এই ক্ষোভে বামফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে আসার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.