বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: কার্শিয়াংয়ের বিদ্রোহী বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মাকে বাগে আনতে এবার পাহাড়ের একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা বিমল গুরুংয়ে (Bimal Gurung) ভরসা বিজেপির। দার্জিলিংয়ের বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তাকে তাঁর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় যেতে নিষেধ করে দিল দলীয় নেতৃত্ব। বিজেপির একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষ্ণুপ্রসাদকে না চটিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভোটের প্রচার থেকে বিরত করার জন্য গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে (GJM) অনুরোধ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে বলেও পাহাড়ের রাজনৈতিক মহলে খবর ছড়িয়েছে। যদিও ওই বিষয়ে বিজেপি বা মোর্চা নেতৃত্ব, কেউই মুখ খোলেনি। এমনকি বিদ্রোহী বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ নিজেও শনিবার দাবি করেন, তাঁর কাছে এ ধরনের কোনও প্রস্তাব আসেনি।এদিকে শনিবার থেকে বিষ্ণুপ্রসাদের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তা নিয়ে তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, এর পর থেকে তাঁর উপর হামলা হলে দায়ী থাকবেন অমিত শাহ, রাজু বিস্তারা।
বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা এতদিন ধরে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেও বিজেপি (BJP) তেমন গুরুত্ব দেয়নি। তাদের প্রত্যাশা ছিল, শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র পেশ করবেন না কার্শিয়াংয়ের (Karseong) বিদ্রোহী বিধায়ক। কিন্তু সেই আশা ভঙ্গ হতেই নড়েচড়ে বসেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে ধরে নিয়ে তারা বিষ্ণুপ্রসাদকে চটাতে চাইছে না। উলটে আলোচনার মাধ্যমে তাঁকে নিজেদের পক্ষে আনতে চাইছে। আর সেই গুরুদায়িত্ব সঁপেছে জোটসঙ্গী মোর্চা নেতা বিমল গুরুংয়ের উপর। যদিও বিমল গুরুং কিংবা তার দলের তরফে কেউ ওই বিষয়ে মুখ খোলেননি। বিষ্ণুপ্রসাদ নিজেও বলেন, “এই ধরনের কোনও প্রস্তাব আমার কাছে আসেনি। এলেও মানব কেন? আমি আমার দাবি থেকে সরছি না।”
নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণার অনেক আগে থেকে ‘ভূমিপুত্র’ প্রার্থী এবং গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সরব ছিলেন বিষ্ণুপ্রসাদ। ভূমিপুত্র প্রার্থী না হলে তিনি নির্দল হয়ে ভোটে লড়বেন, তা জানাতে সিংমারিতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সদর দপ্তরে বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে দেখাও করেন। তখনও গুরুং তৃতীয় ফ্রন্ট খুলবেন নাকি নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, ঠিক করে উঠতে পারেননি। এর পর ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে বিজেপির সঙ্গে জোট করতে পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণ পালটে যায়। ফলে বিষ্ণুপ্রসাদ চাপে পড়ে যান। কারণ, তাঁর আশা ছিল গুরুং ভূমিপুত্র প্রার্থী ইস্যুতে তাঁরই পাশে থাকবেন। সেটা তো হয়ইনি, উলটে গোর্খাল্যান্ড ইস্যুকে সামনে রেখে রাজু বিস্তাকে (Raju Bista) বগলদাবা করে প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন গুরুং। যে রাজু বিস্তা এখন বিষ্ণুপ্রসাদের এক নম্বর ‘পলিটিক্যাল দুশমন।’
তবে ওই পরিস্থিতিতে কিছুটা দমে গেলেও হাল ছাড়েননি বিদ্রোহী বিধায়ক। তিনি নিয়ম করে প্রতিদিন বিষোদগার করে চলেছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে সেটা অসহ্য হলেও বিজেপিকে সইতে হচ্ছে। কারণ, দলীয় নেতৃত্ব এই মূহুর্তে বিধায়ক হারাতে নারাজ। তাই দলীয় স্তরে ব্যবস্থা না নিয়ে সমঝোতার পথ খুঁজছেন। কিন্তু বিষ্ণুপ্রসাদের জেদের সামনে সেই প্রস্তাব কতটা কার্যকর হবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। যদিও দলের বিদ্রোহী বিধায়ককে নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি পাহাড় বিজেপির সভাপতি কল্যাণ দেওয়ান। তিনি বলেন, “কে কোথায় কি বলছেন জানি না। এখন প্রচারের সময়। এসব নিয়ে ভাবার ফুসরত নেই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.