অর্ক দে, বর্ধমান: ভোটের মাঠে ছক্কা বা সেঞ্চুরি হবে কিনা, তা বোঝা যাবে জুন। তবে তিনি হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন এই ‘খেলা হবে’র মধ্যেই সময় বের করে। এবং সেই হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানো রানের প্রতিটিই ভোটের খেলা-কেন্দ্রিক। তিনি নিজেই গান লেখেন। সুর দেন। আবার গায়কও তিনিই। কখনও মঞ্চে মাউথ পিস হাতে। কখনও জনতার ভিড়ে গানে গানে আসর জমাচ্ছেন। মাত্র একমাস। তার মধ্যেই ভোটপ্রচারে গানের হাফ সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে নিজেও ভুলে যান কী কী গান আগে গেয়েছেন। কোনও ব্যাপার নয়, তাৎক্ষণিকভাবে নয়া গান বেঁধে আসর জমানোর ‘অসীম’ ক্ষমতাধর তিনি।
বলা হচ্ছে বর্ধমান পূর্বের বিজেপি প্রার্থী অসীমকুমার সরকারের (Asim Kumar Sarkar) কথা। কাটোয়া থেকে রায়না, কালনা থেকে মেমারি, বিজেপির কবিয়াল প্রার্থী (BJP Candidate) কখনও গাইছেন, ‘অভিষেক ব্যানার্জি শুনেছি তার আর্জি/ সে নূতন জোয়ার এনেছিল আমাদের বাংলায়/ যখন নূতন জোয়ার আনতে গেল/ তখন পচা আলু বের হইল/ ভাল আলু অভিষেক আর খুঁজে পেল না/ আলু পচে হল শেষ, বাংলার এই পরিবেশ/ ভাল আলু খুঁজে তুমি আর পাবে না/ অভিষেকের নূতন তৃণমূল আর হবে না।’ গীত-সঙ্গীতের তীক্ষ্ণ বাণে এভাবেই তিনি বিদ্ধ করছেন রাজ্যের শাসকদলকে।
কখনও আবার খালি গলায় গাইছেন, ‘ও মা শর্মিলা সরকার/ তুমি নাকি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার/ তুমি অদৃশ্য রোগ দেখতে পারো/ চোর দেখার চোখ নেই তোমার/ চাকরি চুরি/ গরু পাচার/ ধর্ষণ কাণ্ডের ফলে তৃণমুলের অধিকাংশ নেতারা আজ জেলে/ তুমি কেন গেলে চোরের দলে/ জনতা জবাব চায় তার।’ গানেই কটাক্ষ ঝরে পড়েছে বিরোধী প্রার্থীর বিরুদ্ধে। কবিয়ালের গানে কটাক্ষ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বিভিন্ন সভা-সমিতি, পদযাত্রায় তিনি গাইছেন, ‘দিদি হবে দিদিমা/ প্রধানমন্ত্রী হবে না/ তাই তৃণমূলের জোড়া ফুলে ভোট দিও না/ যেদিন প্রধানমন্ত্রী হবে/ বাড়ির হুলো বিড়াল বাচ্চা দেবে/ তাই ভোট চাইতে গেলে পরে জায়গা দিও না/ চোরের রানি এই দিদি/ প্রধানমন্ত্রী মোর মোদি/ এমন সাধু মানুষ ভাইরে আর পাবে না।’ গানের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর।
গত ২৮ মার্চ থেকে বর্ধমান পূর্ব (Bardhaman Purba) কেন্দ্রের ভোটপ্রচারে ঝাঁপিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী অসীমকুমার সরকার। একমাস ধরে লোকসভা ভোটের (2024 Lok Sabha Election) প্রচারে যেখানেই গিয়েছেন গানই হয়ে উঠেছে প্রচারের মুখ্য হাতিয়ার। হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক কবিয়াল অসীমের কথায়, ‘‘আমি যখন যেখানে যাই। তাৎক্ষণিকভাবে পরিবেশ বুঝে গান রচনা করি। এটা আমায় অভ্যাস।’’ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী চিকিৎসক শর্মিলা সরকার। ভোট প্রচারের প্রথম দিক থেকেই তৃণমূল প্রার্থীকে নিয়ে একাধিক গান বেঁধেছেন অসীম সরকার। যা নিয়ে বিতর্কও (Controversy) হয়েছিল। কবিয়ালের নিশানা কখনও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)কখনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ভুয়ো জব কার্ড-সহ বিভিন্ন ইস্যুতেও অসীম গানে গানে বিদ্ধ করেছেন রাজ্যের শাসকদলকে। গাইছেন, ‘ভুয়ো জব কার্ড করে যারা টাকা নিল তুলে/ ঘুষ নিয়ে সব অযোগ্যদের চাকরি দেয় ইস্কুলে/ তুমি মনের রোগের ডাক্তার হলে/ চোর দেখার চোখ নাই তোমার।’ সন্দেশখালি ইস্যুতে তিনি গাইছেন, ‘তাই হিন্দু মুসলিম বাঁধল জোট/ এবার পদ্ম ফুলে দেবে ভোট/ চরণ ধরে অসীমের এই প্রার্থনা।’
রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন ইস্যুতে অসীম জোরে কণ্ঠ ছাড়ছেন জোরে। কিন্তু বিজেপির ‘ওয়াশিং মেশিন’ তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্নে কবিয়ালের জবাব তাঁকেও হাসির খোরাক করেছে। নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত শুভেন্দু অধিকারী, চিটফান্ড মামলায় অভিযুক্ত অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মা, প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্য মঞ্চে মহারাষ্ট্রের অজিত পওয়ারের বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ করেছিলেন, তাঁরা বিজেপির সঙ্গে কীভাবে আছে প্রশ্নে কবিয়াল অসীম বলেন, ‘‘একটা কথা শুনে নিন, সাধু সঙ্গ সাধু সঙ্গ সর্বশাস্ত্রে কয়, লবা মাত্র সাধু সঙ্গে কৃষ্ণপ্রাপ্তি হয়। যদি কারও ত্রুটি থেকেও থাকে যখনই আমার মোদিজির সংস্পর্শে এসে গেল সে কিন্তু পরিশুদ্ধ হয়ে গেল।’’ অর্থাৎ চোরও সাধু হয়ে যায় মোদির সংস্পর্শে। কবিয়ালের কথায়, ‘‘গানের মাধ্যমে প্রচার করার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এর ফলে মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থল পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া যায়। সুরের একটা আলাদা প্রভাব রয়েছে। সমস্ত কথা সুর, ছন্দ, লয়ের মাধ্যমে মানুষের মনে বিদ্ধ হয়ে যায়। ফলে খুব সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হয়।’’ ভোটের ফল যাই ঘটুক, ভোটপ্রচারে গানে আর গালগপ্পোয় মঞ্চ জমিয়ে রেখেছেন কবিয়াল!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.