ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: খবরটা চোখ কপালে তোলার মতোই। পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে ঘটনাটা ঘটতে চলেছে মাসখানেকের মধ্যে। সাত জোড়া বাঘিনি আর তাদের সঙ্গী পুরুষ তিন জোড়া। বয়স এক থেকে দেড় বছর। অর্থাৎ প্রায় পূর্ণবয়স্ক। অসম থেকে এমন মোট ২০টি বাঘ আনা হচ্ছে এ রাজ্যে। এবং তা সম্ভবত রাজ্যে এই প্রথম। রাজ্যে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানা গিয়েছে বনদপ্তর সূত্রে।
প্রাথমিকভাবে যা ঠিক হয়েছে তাতে, এই বাঘগুলিকে রাখা হবে আলিপুরদুয়ারের বক্সা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রে (Buxa Tiger Reserve)। সেখানেই তাদের এ রাজ্যের জঙ্গলের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো হবে। যদিও অসমের জঙ্গলের সঙ্গে এ রাজ্যের জঙ্গলের খুব একটা হেরফের নেই। স্রেফ কিছু জায়গায় ঘনত্ব আর জঙ্গলের পরিবেশ বাদে। সময় মতো তাদের প্রজননও হবে সেখানেই। ওই জঙ্গলেই বাঘেদের জন্য কোর এলাকায় চিরতরে একটি প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে দপ্তরের। তাদের এই জঙ্গলে থাকার জন্য প্রথম যা দরকার তা হল পর্যাপ্ত খাদ্য। দপ্তর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাস্তুতন্ত্রে তাদের খাদ্যতালিকা অনুযায়ী হরিণ, বাইসন, জংলি শূকর পর্যাপ্ত সংখ্যায় মজুত রয়েছে এ জঙ্গলে। বিশেষ করে গত দেড় বছরের লকডাউন (Lockdown) আর কড়া বিধিনিষেধকালে জঙ্গলে পর্যটকদের আনাগোনা কম হওয়ার দরুন তার সংখ্যাও বেড়েছে।
জুন-জুলাই থেকেই বাঘেদের প্রজনন ঋতু শুরু হয়। সে সময় থেকে জঙ্গলে পর্যটকদের প্রবেশও নিষিদ্ধ থাকে। রাজ্যে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে এই সময়টাকেই তাই বেছে নেওয়া হয়েছে। বক্সার জন্য এত সংখ্যক বাঘ আনার উদ্দেশ্য সফল হলে পরের দফায় আরও কিছু বাঘ আনা হবে পাশের নেওড়াভ্যালির জন্য। এই মুহূর্তে রাজ্যের বিভিন্ন জঙ্গল মিলিয়ে হাতির সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে হরিণ, বাইসনের সংখ্যা। পর্যাপ্ত রয়েছে গন্ডারও। লেপার্ডের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে রয়্যাল বেঙ্গলের (Royal Bengal Tiger) সংখ্যা কম। রাজ্যের জঙ্গলের কোর এলাকায় তাদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) ভি কে যাদব জানাচ্ছেন, “আলোচনা চলছে। সব কিছু চূড়ান্ত হয়ে গেলে একসঙ্গে কিছু বাঘ আনা হবে।
তবে এই সংখ্যক বাঘ আনার বদলে অসম সরকারের জন্য বাইসন, গন্ডার, হাতি বা জংলি কুকুর দেওয়ার কথাও ভেবে রেখেছে রাজ্য। প্রয়োজনমতো তাদের তা দেওয়া হবে। অসমে এই মুহূর্তে বাঘের সংখ্যা অনেকটাই। সেই খোঁজ নিয়েই রাজ্যের অবস্থার কথা বলে তাদের কাছে তা চাওয়া হয়েছিল। তারাও রাজি। আপাতত তাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে এত সংখ্যক বাঘ আনতে অসম যাবেন রাজ্যের বন দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা। দপ্তরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও জানিয়েছেন এই পরিকল্পনার কথা। তাঁর কথায়, “আমরা চেষ্টা করছি রাজ্যে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির। তার জন্য অসম সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের কাছে বাঘ সংখ্যায় বেশি। আমরা তাদের কাছে বাঘ চেয়েছি। বিষয়টা চূড়ান্ত হয়ে গেলে নির্দিষ্ট সংখ্যক বাঘ ও বাঘিনি এ রাজ্যে আনা হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.