প্রার্থীর সামনেই তুলকালাম তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর। ছবি: উদয়ন গুহরায়।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: রবিবাসরীয় প্রচারের শুরুতেই বিপত্তি। প্রচার চলাকালীন তৃণমূল (TMC) প্রার্থীর সামনেই চরমে উঠল দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি, শেষমেশ দুর্গাপুরে সংঘর্ষের আকার নেয় আইএনটিটিইউসির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। প্রচার থামিয়ে ‘ভয়ে’ মন্দিরে আশ্রয় নিলেন প্রার্থী কীর্তি আজাদ।
দুর্গাপুর (Durgapur) নগর নিগমের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আমরাই গ্রামে দুই বিবাদমান গোষ্ঠীর সংঘর্ষ। আইএনটিটিইউসির দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মিছিলের মধ্যেই বিবাদ বাঁধে। আর তা থামাতে না পেরে ‘ক্লান্ত’ প্রার্থী কীর্তি আজাদ ঢুকে পড়লেন শঙ্করানন্দ আনন্দ আশ্রমের মন্দিরে। সেখানে তিনি অসুস্থও হয়ে পড়েন। হাততালি দিতে দিতে মন্দিরের কীর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাল মেলান মন্দিরের সিঁড়িতে বসে থাকা বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ। প্রায় ৩০ মিনিট পর পরিস্থিতি শান্ত পরে আবার প্রার্থী বের হন প্রচারে।
২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের পর দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের রাশ সিটুর হাতবদল হয়ে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির হাতে আসে। শ্রমিক নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা শেখ শাহাবুদ্দিন-সহ অন্যান্যরা এই ঠিকা শ্রমিক সংগঠন দেখভালের দায়িত্ব পান। তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় ১২ নম্বর ওয়ার্ডে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। একদিকে আমিনুর রহমান ও তাঁর গোষ্ঠী আর অন্যদিকে শেখ শাহাবুদ্দিন ও তাঁর গোষ্ঠী। মাঝেমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠত ১২ নম্বর ওয়ার্ড। শেখ শাহাবুদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয় এর মাঝেই। তাঁদের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয় কিছুদিন আগে আইএনটিটিইউসি রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, আইএনটিটি ইউসির জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটকের হাত ধরে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের কমিটিতে পালাবদলের পর। শেখ শাহাবুদ্দিন এবং তাঁর অনুগামীদের জায়গায় কমিটিতে রাখা হয় আমিনুর রহমান ও তাঁর সঙ্গীদের। নতুন করে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ঘৃতাহুতি পড়ে । এতোদিন ধরে ধিক ধিক করে জ্বলছিল আগুন। তারই রেশ পড়ল এদিনের প্রচারে।
রবিবাসরীয় সকালে বর্ধমান- দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী কীর্তি আজাদ ১২ নম্বর ওয়ার্ডে আসেন প্রচারে। প্রথমেই তৃণমূল কংগ্রেসের ২ নম্বর ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় শেখ শাহাবুদ্দিনকে। শহিদ বেদীতে মাল্যদান করার পর কীর্তি আজাদকে সঙ্গে নিয়ে শাহাবুদ্দিন ও তাঁর দলবল আমরাই গ্রামের রাস্তায় মিছিল শুরু করেন। ৩০০ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে ছিল আমিনুর রহমান ও তাঁর দলবল। কীর্তি আজাদকে নিয়ে শাহাবুদ্দিন ও তাঁর দলবল সেখানে যাওয়া মাত্রই শুরু হয়ে যায় দুই পক্ষের হাতাহাতি। অস্বস্তিতে পড়ে প্রার্থী কীর্তি আজাদ-সহ দলের অন্যান্য নেতৃত্ব। প্রভাত চট্টোপাধ্যায়কেও দেখা যায় ঘটনাস্থলে।
জানা গিয়েছে, দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন কীর্তি আজাদ। সামনে থাকা একটি মন্দিরে গিয়ে বিশ্রাম নিতে দেখা যায় প্রার্থীকে। ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেখ শাহাবুদ্দিন বলেন,”আমরা যখন প্রার্থীকে নিয়ে মিছিল করছিলাম সেই সময় অনেক অবাঞ্ছিত লোক ঢুকে পড়ে আমাদের মিছিলে। তারাই মূলত গন্ডগোল করতে শুরু করে। আমি দলের উচ্চ নেতৃত্বকে বিষয়টি জানাবো।” আমিনুর রহমান বা তার গোষ্ঠীর কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কীর্তি আজাদ এই বিষয়ে বলেন, “অতিরিক্ত উৎসাহ আর প্রেম থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে। কে আগে নিয়ে যাবে তাই নিয়েই প্রতিযোগিতা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.