পলাশ পাত্র, তেহট্ট: ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে তেহট্টের দুই যুবক। চুরি প্রমাণিতও হয়েছে। কেরল পুলিশ দিন কয়েক আগেই দু’জনকেই গ্রেপ্তার করে নিয়ে গিয়েছে। এর জেরে কাজ হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন স্থানীয় কয়েক হাজার নির্মাণ শ্রমিক। ঘটনাস্থল নদিয়ার তেহট্ট। দুর্ভাবনায় নির্মাণ শ্রমিকরা জানিয়েছেন, কয়েকজনকে দুষ্কর্মের ফল ভুগতে হবে শতাধিক মানুষকে। বাইরে গেলে আর কাজ পাওয়া যাবে না। ঠিকাদাররা বিশ্বাস করে কাজে রাখতেই চাইবেন না। রাজ্যে কাজ নেই। ভিনরাজ্যে কাজে গিয়েই চলত সংসার। বছরে দু-একবার বাড়িতে এলেও বেশিটা সময় বাইরেই কাটান এই শ্রমিকরা। কিন্তু এলাকার দুই শ্রমিক কেরলের এক বিয়ে বাড়ির গয়না চুরি করে ধরা পড়েছে। এবার তো বাকিদের কাজে নিতে গেলে ঠিকাদাররা অনেক বেশি ভাবনা চিন্তা করবে। স্বভাবতই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তেহট্টের নির্মাণ শ্রমিকদের।
জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগেই মোবাইলের সূত্র ধরে ১০ লক্ষ টাকার গয়না চুরির কিনারা করেছে কেরল পুলিশ। তেহট্টে এসে দুই চোরকে গ্রেপ্তারও করেছে। ধৃতরা মিঠুন দাস ও রকি দাস। মিঠুনের বাড়ি তেহট্টের মোবারকপুরে। অন্যদিকে রকির বাড়ি বেতাই নতুন পাড়ায়। এই দু’জনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাদের থেকে চোরাই গয়না কেনার অপরাধে স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ী পঙ্কজ বিশ্বাসককেও আটক করেছে পুলিশ। চুরি যাওয়া ৩০০ গ্রাম সোনার মধ্যে ৩০ গ্রাম উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে বিয়েবাড়িতে নির্মাণ কাজ চলছিল। বিয়ে উপলক্ষে নতুন গয়না কেনা হয়েছে। কোনওভাবে সেই খবর পেয়ে যায় রকি ও মিঠুন। তারপর চুরির ছক কষে। ১০ লক্ষ টাকার গয়না চুরির পর পালিয়ে তেহট্টে ফির আসে। এরপর তাদের আরা কেরলে যেতে দেখা যায়নি। এদিকে এতগুলো টাকার গয়না চুপ করে বসে থাকেনি বিয়েবাড়ির লোকজন। পুলিশে খবর দেওয়া হলে তদন্ত শুরু হয়। শেষপর্যন্ত মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে দুই চোরকে চিহ্নিত করে। কেরল পুলিশের তরফে রাজ্য পুলিশকে গোটা ঘটনাটি জানানো হয়। তারপর তেহট্টে এসে রাজ্য পুলিসের সহায়তায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে।
এই ঘটনা জানাজানি হতে সময় নেয়নি। পুলিশ ঘুরে যাওয়ার পর থেকেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া এলাকার নির্মাণ শ্রমিকরা। চুরির জেরে কাজ হারাতে পারেন এই চিন্তায় ঘুম উড়েছে তেহট্ট সীমান্তের নির্মাণ শ্রমিকদের। দিন আনি দিন খাই তেহট্টবাসীর অধিকাংশের রোজগারের উৎস ভিন রাজ্যের কাজ। তেহট্টর বেতাই এক, ছিটকা, কানাইনগর, করিমপুরের নন্দনপুর, মুরুটিয়া, দিঘলকান্দি পঞ্চায়েত বা থানারপাড়া এলাকা-সহ গোটা তেহট্ট মহকুমা, চাপড়া, হাঁসখালি ব্লক থেকে কয়েক হাজার নির্মাণ শ্রমিক ভিন রাজ্যে কাজে যান। চুরির ঘটনার পরে তাঁদের দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে।
এই প্রসঙ্গে পলাশীপাড়ার বিধায়ক তথা তেহট্ট মহকুমার তৃণমূল নেতা তাপস সাহা বলেন, এখানকার কয়েক হাজার মানুষ ভিন রাজ্যে কাজে যায়। সেখানে নির্মাণ শ্রমিকের চাহিদা যেমন রয়েছে, তেমনই রোজগারপাতিও ভাল হয়। এটা রুটি রুজির ব্যাপার। সেখানে কয়েকজন বাইরে গিয়ে বাজে কাজ করলে শাস্তি হওয়া উচিত। তবে দু’জনকে দেখে বাকিদের চরিত্র বিশ্লেষণ করে নিলে বিপদ। আশাকরি তেমনটা ঘটবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.