মেদিনীপুরে দত্তক সংক্রান্ত কর্মশালা, দুই অনাথ শিশু পেল তাদের পরিবার। মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ শিশু উদ্যানে। ছবি– নিতাই রক্ষিত
সম্যক খান, মেদিনীপুর: দত্তক নেওয়া ও দেওয়ার উদ্দেশ্য থেকে শুরু করে দত্তক নেওয়া শিশুরা বর্তমানে কি অবস্থায় আছে তা নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল কর্মশালার। আর সেই কর্মশালা থেকেই দুই দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হল হোমের দুই অনাথ শিশুকে। দত্তক দুই শিশুর একজন পাড়ি দিল সুদূর ইটালিতে তো অপরজন নতুন বাড়ি পেল কলকাতায়।
এর মধ্যে একজন কন্যাসন্তান অন্যজন পুত্রসন্তান। দুজনেই ছিল তাদের মা-বাবার কাছে বোঝা। গতবছর ওই বছর দেড়েকের কন্যাসন্তানটিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল খড়গপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে। চাইল্ড লাইনের হাত ধরে তার ঠাঁই হয়েছিল মেদিনীপুরের সরকারি হোম বিদ্যাসাগর বালিকা ভবনে। আর পুত্রসন্তানটির মেদিনীপুরের এক নার্সিংহোমে জন্ম হলেও তার বাবা মা তাকে নিতে অস্বীকার করে চলে যায়। শেষমেশ তারও ঠাঁই হয় সরকারি হোমে।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার শিশুকন্যাটিকে দত্তক নেন ইটালিয়ান দম্পতি প্যাসকুয়েল সিয়ানো ও আন্না পালোমবা। প্যাসকুয়েল ইটালিয়ান আর্মির একজন সৈনিক। এদিন কর্মশালা অনুষ্ঠানের মধ্যেই ওই দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হল শিশুকন্যাকে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে দত্তক নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন ওই দম্পতি। কয়েক মাস আগে ভারত সরকারেরই সংস্থা সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটির কাছে অনলাইনে দত্তক পাওয়ার জন্য আবেদন আসে। সেই আবেদন পৌঁছয় পশ্চিমবঙ্গ তথা পশ্চিম মেদিনীপুরে। সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর এদিন ওই দম্পতিকে ডাকা হয় মেদিনীপুরে। অপরদিকে অনাথ পুত্রসন্তানের দায়িত্ব পান কলকাতার ব্যবসায়ী দম্পতি অভিজিৎ দাস ও অনুভারানী দাস।
এদিন দত্তক গ্রহণকারী পিতামাতাদের নিয়ে মেদিনীপুরের শিশু উদ্যানে ‘ফাস্টার কেয়ার এণ্ড ফাস্টার কেয়ার লিডিং টু অ্যাডপশন’ শীর্ষক এক কর্মশালা ও সচেতনতা শিবির অনুষ্ঠিত হয়। জেলা সমাজকল্যান দপ্তরের শিশু সুরক্ষা বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত ওই কর্মশালায় গত কয়েক বছরে দত্তক নেওয়া ৩০ দম্পতি তাঁদের সন্তানদের নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেন। ছিল একপ্রকার চড়ুইভাতির আয়োজনও। হাজির ছিলেন জেলা সভাধিপতি প্রতিভা মাইতি, সমাজকল্যান বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক কেমপা হোন্নাইয়া, শিশুকল্যান কমিটির চেয়ারপার্সন তথা কর্মাধ্যক্ষ শান্তু টুডু থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা।
অতিরিক্ত জেলাশাসক কেমপা হোন্নাইয়া বলেছেন, ‘‘ইতিমধ্যে মেদিনীপুরের সরকারি হোম থেকে ৬২ জন শিশুকে বিভিন্ন দম্পতি দত্তক পেয়েছেন। এদের মধ্যে ৮ জন গিয়েছে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম-সহ বিদেশে। এদিনও দত্তক দুই শিশুর একজন গিয়েছে ইটালিতে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরও ৩৬ জন শিশুকে দত্তক দেওয়া হবে। তার প্রক্রিয়া চলছে। এদের মধ্যেও দুই শিশুর একজন ইটালি ও একজন আমেরিকা পাড়ি দেবে।’’ দত্তক প্রক্রিয়ায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.