সৌরভ মাজি, বর্ধমান: অনলাইন প্রতারণায় এবার মহারাষ্ট্র যোগ। ফোন করে এটিএম-এর তথ্য জেনে টাকা লোপাটের ঘটনার তদন্তে নেমে বড়সড় সাফল্য পেল পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের সাইবার সেল। প্রতারণার অভিযোগে মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলা থেকে বিক্রম রামখেলোয়ান শাহ ও বিষ্ণুকুমার পাটোয়ারি নামে দুই প্রতারককে গ্রেপ্তার করে ট্রানজিট রিমান্ডে বর্ধমান নিয়ে এসেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। ধৃতদের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের একজন দোকান মালিক ও অন্যজন সেখানকার বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বিল সংগ্রহের এজেন্ট। এটিএম প্রতারণায় হাতানো টাকা দিয়ে বিভিন্ন লোকের বিদ্যুতের বিল মেটানো হত। এর জন্য প্রতারকরা পেটিএম ব্যবহার করত। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে নগদ নিয়ে নিত তারা। এইভাবে চুরির টাকাকে সাদা টাকায় পরিণত করে দিত তারা। একইসঙ্গে অনলাইনে পেমেন্ট করায় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা থেকে অতিরিক্ত কমিশনও পেত তারা। ভাতার থানার একটি প্রতারণার ঘটনার তদন্তে নেমে এই চক্রের সন্ধান পেয়েছে সাইবার সেল। শুধু বর্ধমান নয়, অন্যত্রও প্রতারণা করা হত বলে প্রাথমিকভাবে সাইবার সেল জানতে পেরেছে। কম করে ১৬ লক্ষ টাকা প্রতারণা হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
[ মামীকে খুনের অভিযোগ, পুলিশ হেফাজতে ভাগ্নে ]
ভাতারের কুবাজপুর গ্রামের আশুতোষ মুখোপাধ্যায় গত ২০ আগস্ট সকালে একটি ফোন পান। ব্যাংক ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে তাঁকে ফোন করে একজন। তারপর তাঁর কাছ থেকে এটিএম কার্ডের বিভিন্ন তথ্য জেনে নেয় সে। সরল বিশ্বাসে আশুতোষবাবু তা দিয়েও দেন। কিছু পরেই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা গায়েব হয়ে যায়। ঘটনার বিষয়ে তিনি ভাতার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ভাতার থানা ও সাইবার সেল তদন্তে নেমে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তারাই ওই টাকা হাতিয়েছিল বলে নিশ্চিত হয় সাইবার সেল।
কিন্তু সেখানেই তদন্ত থামায়নি তারা। অনলাইন প্রতারণা করে হাতানো টাকা কোথায় যাচ্ছে তার তদন্ত শুরু করা হয়। সাইবার সেলের আধিকারিকরা জানতে পারেন, চুরির টাকা মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে ব্যবহার করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের পেটিএম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিদ্যুতের বিল মেটানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ওই টাকা। এরপরই সাইবার সেলের তদন্তকারীরা বিদ্যুৎ গ্রাহক সেজে নজরদারি শুরু করেন। পেটিএম সূত্র থেকে কয়েকজন গ্রাহকের নাম জেনে মহারাষ্ট্র গিয়ে তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন তদন্তকারীরা। তাঁরা নিশ্চিত হন, বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে নগদ টাকা নিলেও ধৃতরা বিদ্যুৎ সংস্থাকে পেটিএম-এর মাধ্যমে টাকা মেটাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১৬ লক্ষ টাকার মত এইভাবে মেটানো হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তাঁরা। তারপরই বিক্রম ও বিষ্ণুকে গ্রেপ্তার করে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের সাইবার সেল। দিনকয়েক আগে সেখানকার আদালতে পেশ করা হয় ধৃতদের। ট্রানজিট রিমান্ডে তাদের বর্ধমান নিয়ে আসা হয়েছে।
[ দুধের শিশুকে আক্রমণ কেন? চিতাবাঘের আচরণে চিন্তিত বনদপ্তর ]
ধৃতদের আইনজীবী পার্থ হাটি এদিন আদালতে জানান, মিথ্যা অভিযোগে তাঁর মক্কেলদের ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ ধৃতদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আবেদন জানায়নি। সরকারি আইনজীবী নারদকুমার ভুঁইঞা জামিনের বিরোধিতা করেন। বিচারক তাদের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন।
ছবি: মুকুলেসুর রহমান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.