মণিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: উলুবেড়িয়া পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে (Uluberia Dumping Ground) মিলল ১৭টি ভ্রূণ। মঙ্গলবারের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযোগের তীর বেসরকারি নার্সিংহোমের দিকে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যান পুর এবং স্বাস্থ্যকর্তারা। কমিটি গঠন করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে তারা। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন পুরকর্তারা।
এদিন সকালে স্থানীয় কাগজ কুড়ানিরা ময়লা ফেলার মাঠে ভ্রূণগুলি দেখতে পায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় উলুবেড়িয়া পুরসভার কর্তারা। তাঁরা উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভ্রূণগুলি উদ্ধার করে আনেন। পুরসভা ও উলুবেড়িয়ার মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভ্রূণগুলির মধ্যে দশটি কন্যা, ছ’টি পুত্র এবং একটি ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়নি।
ভ্রূণগুলি উদ্ধারের পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। তারা পুরকর্তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই ঘটনার সঙ্গে উলুবেড়িয়া পুরসভার এক শ্রেণির কর্মীদের যোগ রয়েছে। তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এর আগেও এধরনের ঘটনা ঘটেছে এবং তা পুরসভাকে জানানো হয়েছে বলে দাবি। তবে এই সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি বলেই জানিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
উলুবেড়িয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ইনামুর রহমান বলেন, “হতে পারে কোনও নার্সিংহোমের পক্ষ থেকে ভ্রূণগুলি ফেলা হয়েছে। আমরা সাধারণভাবে পচনশীল পদার্থ ওখানে ফেলি। কিন্তু কেউ যদি প্যাকেটে করে ফেলে দেয় তাহলে সেটা পুরসভার পক্ষে জানা সম্ভব হয় না।” তিনি আরও জানান, আগামী সোমবার পুরকর্তারা বৈঠকে বসবে। তদন্ত কমিটিও তৈরি করা হবে। কমিটির রিপোর্ট পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর এলাকায় ৩০টিরও বেশি নার্সিংহোম রয়েছে। মৃত ভ্রূণগুলিকে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ শতমুখি শ্মশান বা আশপাশের কোনও জায়গায় নিয়ে গিয়ে মাটিতে পুঁতে দেয়। মনে করা হচ্ছে, কেউ-কেউ সেটা না করে প্যাকেটের মধ্যে ভরে এই ভ্রূণগুলিকে রেখে দেয় এবং পুরসভার গাড়িতে তা দিয়ে দেয়। পুরসভার সাফাই বিভাগের কর্মীরা ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলে দিয়ে গিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে নজরদারিতে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে উলুবেড়িয়া পুরসভার বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্যদপ্তরের একাধিক কর্তার বক্তব্য, পুরসভা এখান থেকে পুরোপুরি দায় এড়াতে পারে না। কারণ কোন হাসপাতালে কত শিশু মারা যাচ্ছে বা জন্মাচ্ছে সমস্ত কিছু রেকর্ড তাদের রাখতে হয় এবং তা স্বাস্থ্যদপ্তরকে জানাতে হয়। তাহলে কি এক্ষেত্রে যথাযথ রেকর্ড পুরসভার কাছে নেই? তাহলে কি যথাযথভাবে পুরসভা নজরদারি করছে না? আবার একসঙ্গে ১০টি কন্যা ভ্রূণ উদ্ধার হওয়ার পরই প্রশ্ন উঠছে, উলুবেড়িয়া পুরসভা এলাকার বেসরকারি প্যাথলজিগুলিতে অবাধে লিঙ্গ নির্ধারণ চলছে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.