সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শনিবার মা সারদার ১৬৫ তম জন্মতিথি। আর প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজ্যজুড়ে ধুমধাম করে পালিত হল তা। ভক্তি-শ্রদ্ধায় সারদা মায়ের জন্মদিন পালিত হল তাঁর জন্ম ভিটে বাঁকুড়ার জয়রামবাটিতে। শুধু বাঁকুড়া নয়, কলকাতাতেও মায়ের বাগবাজারের বাড়িতে পালন করা মা সারদার জন্মতিথি। মা সারদাকে প্রণাম জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
শনিবার সকাল থেকেই উৎসবের মেজাজ জয়রামবাটিতে। সকালে বিশাল এক প্রভাত ফেরির মধ্যে দিয়ে যার সূচনা হয়। প্রভাত ফেরিতে অংশ নিয়েছিল বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, মিশনের মহারাজরা ও অগণিত ভক্ত। এরপরে পুজো-পাঠ এবং মঙ্গল আরতির মধ্য দিয়ে মা-কে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই দিনটি উপলক্ষে বহু দূর দূরান্ত থেকে অগণিত ভক্ত ভিড় জমিয়েছেন জয়রামবাটিতে। এদিকে, মায়ের বাগবাজারের বাড়িতেও উৎসবের আবহ। সেখানেও সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে মা-এর জন্মতিথি। উপস্থিত রয়েছেন অগণিত ভক্ত। আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ পুজোর। প্রথমে মঙ্গলারতি, তারপর পুজো এবং সবশেষে হবে ভোগ বিতরণ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘মা সারদা দেবীর জন্মতিথিতে প্রণাম।’ অন্যদিকে, বেলুড়মঠেও আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ পুজোর। সেখানেও সমাগম হয়েছে প্রচুর ভক্তের।
মা সারদার জন্মতিথি আজ নয়, চলে আসছে বহুদিন ধরেই। সেদিকে নজর রাখলেই দেখা যাবে মা সারদা আসলে যে শক্তির একটি রূপ, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহের জায়গা নেই। মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া হোক কিংবা ক্ষেমাঙ্করী থেকে মা সারদা নামকরণ, সবেতেই নিজের ঐশ্বরিক ক্ষমতার নির্দশন রেখেছেন তিনি। বিশেষ করে জন্মতিথির উৎসবের দিকে তাকালে তা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে। এ সেই সময়ের ব্যাপার, যখন ঠাকুর দেহ রেখেছেন। প্রতিষ্ঠা হয়েছে রামকৃষ্ণ মিশনেরও। ঠাকুরের অবর্তমানে মাকে ঘিরেই চলছে ছেলেদের যাবতীয় কাজকর্ম। তাঁদের কাজ, আনন্দ- সবেরই মধ্যমণি তখন সারদা। দেবী আর মাতৃত্ব- এই দুই অনায়াসে দুই হাতে বহন করে চলেছেন তিনি। ফলে, তাঁর জন্মতিথি ঘিরেও চলছে সাড়ম্বর প্রস্তুতি।
জন্মতিথির বেশির ভাগ সময়েই মা থাকতেন বাপের বাড়ি জয়রামবাটিতে। জগদ্ধাত্রী পুজোর কিছু দিন পরেই তাঁর জন্ম হয়। ও দিকে, স্বপ্নাদেশ পেয়ে তাঁর মা শ্যামাসুন্দরী দেবী শুরু করেছিলেন জগদ্ধাত্রী আরাধনা। তাই এই সময়টা সচরাচর জয়রামবাটি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতেন না তিনি। সেখানে যখন তাঁর জন্মতিথি পালনের তোড়জোর চলত, তখনও মুখ্য ভূমিকা নিতেন তিনিই। আত্মীয়রা যাতে জন্মতিথিতে কোনও কারণে অসন্তুষ্ট না হয়, সে দিকে সজাগ নজর রাখতেন মা। আবার, গ্রামবাসীরাও যাতে মনঃক্ষুণ্ণ না হয়, সেই দিকে দৃষ্টি রেখে সাধ্যমতো আয়োজন করতে হত উৎসবের। সামান্য মানুষের সাধ্য কী, এমন ভাবে সব দিকেই ভারসাম্য রক্ষা করা!
যেমন, স্বামী ঈশানানন্দের লেখা থেকে জানা যায়, মায়ের ভাই, যাঁকে সবাই কালীমামা বলেই চিনতেন, তিনি ছিলেন কলহপরায়ণ। মায়ের জন্মতিথির সব আয়োজনের ভার তিনি নিজেই বহন করতে চাইতেন। দেখা গিয়েছে একাধিকবার তিনি যাতে কলহ না করেন, সেই দিকে বিশেষ সজাগ থাকতেন মা। সেই জন্য একবার বরদা মহারাজকে ছোট করে উৎসব করার ভার দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও শেষ মুহূর্তে সেই পরিকল্পনা বাতিল করে দেন মা স্বয়ং। বরদা মহারাজকে ডেকে বলেন- “দেখ বরদা, এবারে কোতলপুরের হাট কালীকে দিয়েই করাতে হবে, কদিন থেকে এর জন্য সে ঘোরাঘুরি করছে। শেষে চটেমটে একটা কাণ্ড বাধাবে।“ এ শুধুই মায়ের তুখোড় বুদ্ধির নিদর্শন নয়, সেই সঙ্গে করুণাও। তিনি ভালই জানেন- ভাইয়ের উৎসবের সর্বময় কর্তা হওয়ার বাসনা যতখানি, তার চেয়ে ঢের বেশি ইচ্ছা দিদির জন্মতিথিটি নিজের উদ্যোগে সুসম্পন্ন করা। বুঝতে পেরে সেই ইচ্ছাও পূরণ করেছেন মা।
তবে ব্যক্তিগত ভাবে জন্মতিথিতে বিশেষ আয়োজন করা তেমন মনঃপূত ছিল না মায়ের। জানা যায়, ১৯০৭ সালে জয়রামবাটিতে জন্মদিনে কী হবে জানতে চাইলে মা বলেছিলেন- “আমি একখানা নতুন কাপড় পরব, ঠাকুরকে একটু মিষ্টান্নাদি করে ভোগ দেওয়া হবে, আমি প্রসাদ পাব। এই আর কি।” এই অনাড়ম্বড় মনোভাব নিয়েই নিজের জন্মতিথিটি বরাবর কাটিয়ে গিয়েছেন মা। মাঝে মাঝে আবার তাঁর জন্মতিথির কথা খেয়ালও থাকত না। সেই প্রসঙ্গও উঠে এসেছে স্বামী নির্লেপানন্দের লেখায়। সেই জন্মতিথিতে মা ছিলেন কলকাতায়। গঙ্গাস্নান সেরে, উদ্বোধন কার্যালয়ের বাড়িতে ফিরে তিনি লক্ষ্য করেন যোগীন-মায়ের ব্যস্ততা। মা অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, “এসব কি গো যোগেন? মায়ের দিকে একটু চেয়ে থেকে, গভীর প্রীতির সঙ্গে মার চিবুক স্পর্শ করে যোগীন-মা বললেন,, আজ যে তোমার জন্মতিথি, মা!” ভুবনভোলানো হাসি হেসে মা বললেন, “ও মা তাই? ” এরকমই ছিল তাঁর উদাসীনতা!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.