ছবি: প্রতীকী
সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: হস্টেলে অমানসিক নির্যাতনের শিকার ১৪ বছরের ছাত্র। এমনই অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির একটি বেসরকারি স্কুলে। তবে ছাত্রটির নির্যাতনকারী কে বা কারা, তা নিয়ে দানা বেঁধেছে ঘোর রহস্য।
রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ১৪ বছরের কিশোরকে। সেই সময় তার নাক ও কান থেকে রক্ত পড়ছিল। একটি চোখে ছিল জমাট রক্ত। আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে তার পুরুষাঙ্গেও। গলায় রয়েছে গভীর কালশিটে দাগ। বর্তমানে হাসপাতালে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভরতি ওই কিশোর। ঘটনাকে কেন্দ্র করে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়। ইতিমধ্যেই কিশোরের পরিবার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। প্রকৃত অপরাধীকে ধরতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষও। অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয়েছে তদন্ত।
উস্তির মালঞ্চ মিশন উচ্চমাধ্যমিক আবাসিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে বছর ১৪ ওই মেধাবী কিশোর। স্কুলের হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করত সে। হস্টেলের একটি ঘরেই একসঙ্গে ২০ জন ছাত্র থাকে। গত ৩০ মার্চ রাত একটা নাগাদ ছাত্রটির চিৎকারে রুম ইনচার্জ ও কয়েকজন সহ-শিক্ষক ঘরে ছুটে এসে দেখেন ওই ছাত্রের নাক, কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এক চোখে জমাট বেঁধে রয়েছে কালো রক্ত। গোঙানির শব্দ বেরোচ্ছে মুখ থেকে। গলায় রয়েছে কালশিটে দাগ। সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকরা তাকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান।
নির্যাতিত কিশোরের পরিবারসূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিন রাত একটা নাগাদ হস্টেলের রুম ইনচার্জ ছেলেটির অসুস্থতার কথা বাড়িতে ফোন করে জানান। ফোনে তাঁদের জানানো হয়, ছেলের কান থেকে রক্ত বের হচ্ছে। গাঁজা বের হচ্ছে মুখ থেকে। ওই কিশোরের বাবা রঙ্গিলাবাদ পঞ্চায়েতের আলমপুরের বাসিন্দা। পেশায় একজন অটোচালক। ফোন পেয়েই নার্সিংহোমে পৌঁছে তিনি দেখেন ছেলের করুণ অবস্থা। সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে রয়েছে সে। চোখ, কান ও নাক থেকে রক্ত বের হচ্ছে। গাঁজা উঠছে মুখ থেকে। ছাত্রটির পুরুষাঙ্গেও গভীর আঘাতের চিহ্ন দেখা গিয়েছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ছাত্রটিকে নিয়ে আসা হয় ডায়মন্ডহারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ওই রাতেই তাকে স্থানান্তরিত করা হয় SSKM হাসপাতালে। সেখানেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন ওই ছাত্র।
নির্যাতিত কিশোরের বাবা জানান, অপরাধী কে বা কারা তা এখনও তাঁদের অজানা। কারণ ওই ছাত্রের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ থাকায় তার কাছ থেকে এখনও কিছুই জানতে পারেনি পুলিশ। নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না করলেও ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। এদিকে আহত ছাত্রটির পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের সম্পাদক আব্দুর রউফ বৈদ্য জানান, ২০০৬ সালে স্কুল স্থাপিত হওয়ার পর বিগত ১৭ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটল। তাঁরা নিজেরাও এই ঘটনায় বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন। আহত ছাত্রের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে তিনি জানান, এই ঘটনায় প্রকৃত অপরাধী যেই হোক তাকে খুঁজে বের করতে স্কুলের পক্ষ থেকেও উস্তি থানায় আলাদাভাবে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। সেই রাতে ওই রুমে থাকা কুড়িজন ছাত্রকে হস্টেল ছেড়ে যেতেও নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই রাতে হস্টেলের ঘরে থাকা বাকি ছাত্রদের ও রুম ইনচার্জকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.