সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ঝাড়খন্ডের ঘর ভেঙে মাঠা বনাঞ্চলে চোখ রাঙাচ্ছে হাজারিবাগের ১৪টি বু্নো হাতি। তাই লাগোয়া বাঘমুন্ডি, অযোধ্যা বনাঞ্চলে বুনো হাতি থেকে সতর্ক থাকতে বড়দিনের ভিড়ে মাইকিং করে পর্যটক ও পিকনিকের দলকে সাবধান করল বনদপ্তর। সেই সঙ্গে অযোধ্যা পাহাড়ের সরকারি–বেসরকারি সমস্ত কটেজ, হোটেল, লজগুলিতে চিঠি পাঠিয়ে পর্যটকদের জঙ্গলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। ফলে পাহাড়ি পথে নিজেদের মত করে পর্যটকদের ট্রেকিং আপাতত বন্ধ। এই শীতে ভরা পর্যটনের মরশুমে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের বিস্তীর্ন এলাকায় হাতির আতঙ্কে বুধবার বড়দিনের আনন্দ মাটি হয়ে যাওয়ায় মনমরা পর্যটকরা।
গত শনিবার রাত থেকেই হাজারিবাগের ১৪টি বু্নো হাতি অযোধ্যা পাহাড়ের গবরিয়ার জঙ্গলে ছিল। দু’রাত সেখানে থাকার পর সোমবার রাতে এই দলটি পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের মাঠা বনাঞ্চলে ঢুকে পড়ে। তখন বনকর্মীরা হুলা পার্টির সাহায্যে দলটিকে ঝাড়খন্ডের পথ ধরানোর চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। তারপর থেকে টানা দু’দিন ওই হাতির দলটি একেবারে ঝাড়খন্ড সীমানায় মাঠা বনাঞ্চলের চড়কপাথর জঙ্গলে রয়েছে। কিন্তু বনদপ্তর কোনওভাবে ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তাই মাঠা লাগোয়া বাঘমুন্ডি ও অযোধ্যা বনাঞ্চলে মাইকিং করে বুধবার প্রচার করে ওই দুই বনাঞ্চলের কর্মীরা।
পর্যটনকেন্দ্রের অযোধ্যা পাহাড়ের সাইট সিয়িং মাঠা বনাঞ্চল হলেও পর্যটকদের ভিড় থাকে বাঘমুন্ডি ও অযোধ্যা হিলটপের পাশে থাকা সাইট সিয়িং গুলিতেই। এই বিস্তীর্ন এলাকা পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের মধ্যে পড়ে। বাঘমুন্ডি বনাঞ্চলের আধিকারিক মনোজকুমার মল্ল বলেন, “মাইকিং করে আমরা পর্যটকদের সতর্ক করে দিয়েছি। তাঁরা যাতে ঘন জঙ্গলের দিকে পা না বাড়ান।” একইভাবে অযোধ্যা বনাঞ্চলের তরফেও এদিন হিলটপের বিভিন্ন জায়গায় মাইকিং চলে। অযোধ্যা বনাঞ্চলের আধিকারিক সাগর চক্রবর্তী বলেন, “পাহাড় জুড়ে থাকা সরকারি–বেসরকারি সমস্ত অতিথি আবাসকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, তাঁদের কাছে থাকা পর্যটকদের যেন সাবধানে যাতায়াত করেন।”
এদিকে হাতির আতঙ্কে অযোধ্যা পাহাড় জুড়ে থাকা পর্যটকরা ভয়ে কাঁটা। বিকেল হতেই হোটেলবন্দি তাঁরা। এমনকি ভোর বেলায় উসুলডুংরিতে সূর্যোদয় দেখতেও পা বাড়াচ্ছেন না পর্যটকরা। যাদবপুর থেকে বড়দিনে অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে আসা পূর্ব রেলের কর্মী গৌতম দাস বলেন, “পাহাড়ে এসেই শুনছি হাতির কথা। এভাবে দল বেঁধে থাকা বুনো হাতি কখনো দেখিনি। ভাবলেই অ্যাডভেঞ্চার হচ্ছে বটে। কিন্তু ভয়ও লাগছে। তাই সন্ধেবেলা বের হচ্ছি না।” বিকেলের পর থেকেই অযোধ্যা পাহাড়ের সমস্ত সাইটি সিয়িং-সহ হিলটপ এলাকা শুনশান হয়ে যাচ্ছে। মাঠা বনাঞ্চলের আধিকারিক পল্লববিকাশ বড়াল বলেন, “ওই ১৪ টি হাতি এখন মাঠার চড়কপাথর এলাকায় রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ঝাড়খন্ডে গিয়ে ঘর ভেঙে আবার এই জঙ্গলে আসে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.