শিশু রণজিতের শ্বাসনালিতে আটকে থাকা এই সেই পিন।
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ১৩ মাসের শিশুর শ্বাসনালিতে আটকে মোবাইল চার্জারের পিন। জটিল অস্ত্রোপচার করে শিশুকে বাঁচালেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। দাদার সঙ্গে খেলতে খেলতে মোবাইলের চার্জারের পিনটি গিলে ফেলেছিল ১৩ মাসের শিশু রণজিৎ মাল। সেই পিন গিয়ে শ্বাসনালিতে আটকে যায়। প্রাণসংশয় দেখা দেখা দেয় শিশুটির। বীরভূমের এক সরকারি হাসপাতাল অস্ত্রোপচার করতে পারবে না, জানিয়ে রেফার করে দেয় বর্ধমানে। সেখানে আসার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই জটিল অস্ত্রোপচার করে প্রাণরক্ষা হল শিশুর। সোমবার সকালে সফল অস্ত্রোপচার করে সাফল্যের নজির গড়ল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি (নাক-কান-গলা) বিভাগ। ব্রঙ্কোস্কপি করে বের করা হয়েছে চার্জারের পিন।
এই জটিল অস্ত্রোপচারের জন্য তিন সদস্যর টিম গড়েছিল ইএনটি বিভাগ। চিকিৎসক ঋতম রায়, গণেশচন্দ্র গায়েন ও মৈনাক সামন্ত এদিন সকালে অস্ত্রোপচার করেন। অ্যানাস্থেসিস্ট হিসেবে ছিলেন সামান্থা ঘোষ মৌলিক। চিকিৎসক ঋতমবাবু জানান, এদিন ভোরে শিশুটিকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। শিশুটি তখন তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছে। দ্রুত এক্স-রে করে কর্ডের অবস্থান দেখে নেওয়ার পর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয় চিকিৎসকদের তিন সদস্যের টিম। এরপর অস্ত্রোপচার করে চার্জারের পিনটি রণজিতের শ্বাসনালি থেকে বের করা হয়েছে। আপাতত সুস্থ রয়েছে রণজিৎ। পর্যবেক্ষণের জন্য তাঁকে বর্ধমান হাসপাতালের শিশু বিভাগের ভরতি রাখা হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রণজিৎ মালের বাড়ি রামপুরহাটে। রবিবার বিকেলে বাড়িতে দাদার সঙ্গে খেলা করছিল সে। ঘরের মধ্যেই পড়েছিল মোবাইলের চার্জারের কর্ডের পিন। দাদা সেটি তুলে ভাইয়ের হাতে দিতেই মুখে পুরে দেয় রণজিৎ। সঙ্গে সঙ্গে গিলেও ফেলে সেটা। প্রায় এক ইঞ্চি লম্বা ওই অংশটি রণজিতের শ্বাসনালিতে চলে যায়। তাকে প্রথমে রামপুরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা ঝুঁকি না নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেন। সোমবার ভোরে তাকে বর্ধমানে আনা হয়। চিকিৎসকরা দেখার পর এক্স-রে করানো হয়। চিকিৎসক ঋতমবাবু জানান, এক্স-রে তে দেখা যায় শ্বাসনালি থেকে সেই পিন বাঁ দিকে ঢুকে ফুসফুসের একাংশকে ব্লক করে দিয়েছে। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল শিশুটির। পরীক্ষার পর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকরা।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর একইভাবে অস্ত্রোপচার করে এক শিশুর গলা থেকে আতা ফলের বীজ বের করেছিলেন এই হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকরা। ১১ মাসের এক শিশুকন্যা কোনওভাবে আতা ফলের বীজ গিলে ফেলায় সেটি শ্বাসনালিতে আটকে গিয়েছিল। ব্রঙ্কোস্কপি করে হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকরাই শিশুটির প্রাণ ফিরিয়ে দেন।
ছবি: মুকুলেসুর রহমান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.