ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: করোনা আবহে নিঃশব্দে হানা দিয়েছে। একের পর এক ঘায়েল হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ। ডেঙ্গু নয়। নয় ম্যালেরিয়া। ঘাতকের নাম স্ক্রাব টাইফাস (Scrub Typhus)। কোভিড-১৯ ভাইরাসের দাপটে যখন গোটা দেশ নাজেহাল, ঠিক সেই সময়ে অজান্তেই থাবা বসিয়েছে স্ক্রাব টাইফাস। সেপ্টেম্বরের প্রথমেই জেলাওয়ারি যে তথ্য স্বাস্থ্য দপ্তরে জমা পড়েছে তাতে রাজ্যে ১৩,৭০০ জন স্ক্রাবের কামড়ে অসুস্থ। মৃত্যুর কোনও খবর নেই। স্বাস্থ্য ভবনের তথ্য অনুযায়ী রাজ্যের বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিকে আসা প্রতি দশ রোগীর মধ্যে ২-৩ জন স্ক্রাবের কামড়ে অসুস্থ। রাজ্যে স্ক্রাব টাইফাসের মারমুখী চেহারা আশঙ্কা করে ইতিমধ্যে আলাদা সেল খোলা হয়েছে। সেলের তথ্য অনুযায়ী স্ক্রাব টাইফাসের আক্রমণে সব চেয়ে বেশি অসুস্থ মুর্শিদাবাদ। তারপরই পূর্ব মেদিনীপুর এবং তৃতীয় জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা। এমনকী, উত্তর শহরতলির ডানলপ, বরানগর থেকেও স্ক্রাব টাইফাসে অসুস্থ হয়ে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী আসছেন।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তীর কথায়, “গত দু’মাসে মুর্শিদাবাদ, কলকাতা-সহ কমবেশি সব জেলায় স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণ বেড়েছে। চিকিৎসা চলছে।” স্বাস্থ্য অধিকর্তার কথায়, “ঘটনা হল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তাররা স্ক্রাব টাইফাসের লক্ষণ বুঝতেই পারেন না। ফলে রোগী দ্রুত অসুস্থ হন। খিঁচুনি হয়। জ্ঞান হারান। অবস্থা হাতের বাইরে চলে যায়।” ডেঙ্গুর মতোই রক্তের এলাইজা টেস্ট করে বোঝা যায় স্ক্রাব টাইফাসের আক্রমণ। মাঠ বা বাগানের ইঁদুরের ঘাড়ে বা পিঠে বসে থাকা অতি ক্ষুদ্র এক ধরনের কীটের দংশনে এই রোগ হয়। কামড়ের তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে জ্বর, গা-ব্যথা, বমিভাব শুরু হয়। স্বাস্থ্য অধিকর্তার কথায়, “রোগ ধরতে না পারলে মৃত্যু অবধারিত। রাজ্যের ৩০টি হাসপাতালকে স্ক্রাবের চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে। অজয়বাবুর কথায়, “সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ হয়েছে এই রোগ নির্ণয়ের। কিন্তু এত বেসরকারি চিকিৎসককে শেখানোর মতো সময় ও বিশেষজ্ঞের সমস্যা আছে।”
সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে স্ক্রাবের তথ্য স্বাস্থ্য দপ্তরে পাওয়ার জন্য পৃথক ওয়েব পোর্টাল তৈরি হবে। তবে প্রাইভেট চিকিৎসকদের কীভাবে এই পোর্টালে যুক্ত করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের স্ক্রাব গাইডলাইনে বলা হয়েছে পাঁচ দিনের বেশি জ্বর হলেই ডেঙ্গুর মতো এলাইজা টেস্ট করতে হবে। সঙ্গে ডক্সিসাইক্লিন ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল রোগীকে দিতে হবে। রোগীর ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত কোনও অংশে ছোট-গভীর ক্ষত, সঙ্গে জ্বর, তীব্র যন্ত্রণা হলেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ স্বাস্থ্য দপ্তরের। শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক জানিয়েছেন, “এই ১৩৭০০ হিমবাহের চূড়া মাত্র। আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। সরকারি হাসপাতালের বাইরে অসংখ্য বেসরকারি চিকিৎসক, ক্লিনিক, হাসপাতালে স্ক্রাবের কামড়ের অসুস্থদের চিকিৎসা হচ্ছে। সেই সংখ্যা অজানা স্বাস্থ্য দপ্তরের। যেমন অজানা বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে কতজনের মৃত্যু হয়েছে। অবিলম্বে স্ক্রাব তথ্য স্বাস্থ্য দপ্তরে জানানোর ব্যবস্থা হোক। কারণ, মারণ হলেও এই রোগের চিকিৎসা আছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.