বিপ্লবচন্দ্র দত্ত: নদিয়ার শান্তিপুরের চৌধুরিপাড়ার বিষমদ কাণ্ডে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা৷ আজ, বৃহস্পতিবার বিষমদে আরও এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম কৃষ্ণ মাহাতো৷ পেটে ব্যথা, বমির উপসর্গ নিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে শান্তিপুর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি৷ এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত বিষমদের বলি হয়েছেন ১২ জন৷ বিষমদ পান করে এখনও পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ২৩ জন৷ আগামিকাল শুক্রবার বিষমদ কাণ্ডের প্রতিবাদে গোটা নদিয়া জেলাজুড়ে ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দিয়েছে এসইউসিআই৷ অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে কড়ার শাস্তির দাবিও জানিয়েছে এসইউসিআই৷ অন্যদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গ্রামে ঢুকে বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিতে শুরু করলেন শান্তিপুরের নতুন ওসি মুকুন্দ চক্রবর্তী৷ এদিন সকালেই ক্লোজ করা হয় শান্তিপুর থানার ওসি সৌরভ চট্টোপাধ্যায়কে৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, পুলিশি ধরপাকড় অভিযানে এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে৷ বিষমদ কাণ্ডে আপাতত ছ’জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে শান্তিপুর থানার পুলিশ৷
স্থানীয়দের দাবি, শান্তিপুর থানার পুলিশের মদতেই এতদিন দাপট দেখিয়ে বেআইনি মদের কারবার চালাত৷ সেই অভিযোগ সামনে আসতেই কড়া পদক্ষেপ নিতে শুরু করে রাজ্য প্রশাসন৷ বিষমদ কাণ্ডের জেরে ক্লোজ করা হয় শান্তিপুর থানার ওসি সৌরভ চট্টোপাধ্যায়কে। তাঁর সঙ্গে জেলার আবগারি দপ্তরের ডেপুটি কালেক্টর-সহ ১২ জন আধিকারিককে সাসপেন্ডও করা হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর৷ এলাকার মানুষের দাবি, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন এই চোলাই কারবারে রাশ টানলে এতগুলি মানুষ বলি হতেন না৷
[সালিশি সভায় কান ধরে ৫০ বার ওঠবোস, অত্যাচারে নষ্ট গৃহবধূর গর্ভস্থ ভ্রূণ]
স্থানীয়দের কাছ থেকে এই অভিযোগ পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন৷ শুরু হয় এলাকায় তল্লাশি৷ জেলা সফর থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে রাজ্যের অর্থ ও আবগারি মন্ত্রী অমিত মিত্রকে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দেন৷ এদিন সকালেই তদন্তকারী দলের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে যান৷ এলাকায় হানা দিয়ে বেশ কয়েকটি চোলাই ঠেক ভাঙে পুলিশ৷ নষ্ট করা হয় বেশ কয়েক লিটার চোলাই ও চোলাই তৈরির সামগ্রী৷
[প্রেমের প্রস্তাবে না, প্রতিশোধ নিতে ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ]
এদিনের এই ঘটনা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রীর আশঙ্কা, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে মূলত কোনও জিনিসের আড়ালে করে বিষমদ পাচার করা হচ্ছে এ রাজ্যে। এমন রিপোর্ট কয়েকদিন ধরেই পেয়েছে রাজ্য। তবে শান্তিপুরের মৃত্যুর কারণ দেশি মদ না চোলাই মদ, তা তদন্তসাপেক্ষ। মগরাহাটের সংগ্রামপুরে চোলাই মদের বলি ছিলেন শতাধিক। স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার বিকেলে শান্তিপুর থানার নৃসিংহপুরের একটি চোলাই মদের ঠেক থেকে মদ খেয়েই এই কাণ্ড ঘটেছে। নৃসিংহপুরের চৌধুরিপাড়ায় এই চোলাইয়ের ঠেকটি চলত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গঙ্গার ওপার থেকে নৌকায় করে এপারের ঠেকে পৌঁছায় চোলাই মদ৷ আশপাশের ইটভাটা ও খেতের শ্রমিকরা এদিন বিকেলে সেই ঠেক থেকে মদ খান বলে দাবি স্থানীয়দের। সন্ধ্যা নামতেই প্রতিক্রিয়া শুরু হয় বিষমদের৷ চৌধুরিপাড়া এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার প্রায় একইসঙ্গে পেটব্যথা ও বমি শুরু হয়৷ প্রত্যেকের গায়ে জ্বালা হচ্ছিল৷ খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ যান প্রশাসনের আধিকারিকরাও৷ বিষমদ কাণ্ডে অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যেই শান্তিপুরে চারজন চোলাই বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ ধৃতদের জেরা করছে পুলিশ৷
ছবি: সুজিত মণ্ডল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.