শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন তিনি। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪০ বছর। সে বারের কথা বেশ মনে আছে তাঁর। পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে ভোট দিতে গিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকে একবারও ভোটদান থেকে বিরত থাকেননি। প্রতিবারই তিনি হেঁটে গিয়েছেন ভোটকেন্দ্রে। ভোট দিয়েছেন। এবারও তিনি হেঁটেই ভোটকেন্দ্রে যাবেন। তবে ভোট কেন্দ্রটা এবার বাড়ির সামনে। আধ কিলোমিটার দূর। ২৩০ দাসপুর বিধানসভার খাটবাড়ুই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেবেন কালীপদ প্রামাণিক। ১১০টি বসন্ত পার করেছেন তিনি।
কালীপদ প্রামাণিক এখনও হেঁটে বাজারহাট করতে যান। তবে কখনওই জুতো পরেন না। খালি পায়েই হেঁটে বেড়ান। তাঁর বাড়ি দাসপুরের খাটবাড়ুই গ্রামে। গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ বাসিন্দা তিনি। এখনও খালি চোখে খবরের কাগজ পড়তে পারেন। সকাল সন্ধ্যায় বাড়িতে গীতা পাঠ করেন তিনি। মজার ব্যাপার হল সুস্থ থাকতে তিনি কোনও ওষুধ খাননি। খাওয়ার প্রয়োজনও হয়নি।
বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ ফুট দূরে তাঁর এক চিলতে জমি। সেই জমিতে নিজের হাতে নানান সবজি চাষ করেছেন। প্রতিদিন সকালে চা, বিস্কুট মুখে দিয়ে সেই জমিতে চলে যান। সেই জমিতেই কাজ করেন তিনি। সার, ওষুধ কিনতে তিনি নিজেই বাজারে যান। এহেন কালীপদবাবু গ্রামে রীতিমতো শ্রদ্ধার পাত্র। সদাহাস্যময় কালীপদবাবু স্মৃতি বেশ টাটকা। জীবনের প্রথম ভোটদানের স্মৃতি বেশ মনে আছে।
সেই স্মৃতির পথে হেঁটে তিনি জানালেন, “প্রায় পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে ভোট দিতে গিয়েছিলাম। সে বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জওহরলাল নেহরু। তার পর যতবার ভোট হয়েছে ততবারই ভোট দিয়েছি। এবারও ভোট দিতে যাব।” লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত ভোট কোনওটাই বাদ দেননি তিনি। একমাত্র মেয়ে সাবিত্রী হাজরার কাছে থাকেন। প্রায় ৫০ বছর আগে স্ত্রী প্রয়াত হয়েছেন। একতলা মাটির বাড়িতে মেয়ের কাছেই থাকেন তিনি। অনেকের মতো অবশ্য তাঁরও আক্ষেপ রয়েছে। মাস ছয়েক হল তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বার্ধক্য ভাতার টাকা জমা পড়েনি। তিনি বলেন, “টাকাটা জমা পড়েনি। টাকাটা পেলে ভাল হত।” তবে তার জন্য ভোট বয়কট করবেন না তিনি। ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যাবেন হেঁটে। নিজের ভোট নিজেই দেবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.