বাবুল হক, মালদহ: পেট ভরাতে কাজের খোঁজে গিয়ে এখন গাঁ উজাড়! এক এক করে এগারো জনের মৃত্যুর খবর পৌঁছে গিয়েছে বুধবার দুপুরেই। আরও বাড়তে পারে প্রাণহানির সংখ্যা। গ্রামের নাম চৌদুয়ার। মালদহের রতুয়া-২ নম্বর ব্লকের কোকলামারি এলাকার চৌদুয়ার গ্রামেরই ১১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে মিজোরামের দুর্ঘটনায়। আশেপাশের গ্রামের আরও ৫ জন রয়েছেন মৃতের তালিকায়। জেলার মোট প্রাণহানির সংখ্যা কমপক্ষে ২৩।
মালদহের চৌদুয়ারের বাসিন্দা সাইদুর রহমান রয়েছেন সেই তালিকায়। তাঁর হতভাগা স্ত্রী আঞ্জুরা বিবি শোকে কাতর। কীভাবে সংসার চলবে? তিনি বলেন, “পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন স্বামী। তিনটি নাবালক সন্তান রয়েছে। বৃদ্ধ শাশুড়ি মা বাবা রয়েছেন। কি করে সংসার চলবে জানি না। একমাস আগে বাড়ি থেকে কাজে যোগ দিতে মিজোরাম গিয়েছিল। ফোনে প্রতিদিন কথা হত। কাল সকালে মিজোরাম থেকে ফোনে কথা বলে। আজ সকালে মোবাইলে নিজের ছবি পাঠায়। তারপর শুনলাম, ব্রিজ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে আর কথা হয়নি।”
চৌদুয়ার গ্রামের বাসিন্দা সুলতান আলি বলেন, “আমাদের এখান থেকে ইদের পর অনেকেই গিয়েছিল কাজ করতে। আজ সকালে শুনলাম এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা। সব থেকে বেশি মারা গেছে আমাদের গ্রামের।” চৌদুয়ার গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ আমিরউদ্দিন বলেন, “আমাদের গ্রাম থেকেই প্রায় ১১ জন মারা গিয়েছে। এরকম আছে একই পরিবারের ছয় জনও মারা গিয়েছেন। ওদের মৃত দেহ আনার ব্যবস্থা করে দিক প্রশাসন। বাকিদের ও সঠিকভাবে খোঁজ দিক।” এলাকাবাসীর দাবি, যাদের এখনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তাদের আগে খোঁজ দিক প্রশাসন। যারা আহত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। আর যারা মারা গিয়েছেন তাদের মৃতদেহ গ্রামে ফেরানোর যাতে সঠিক ভাবে ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরাও মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।
সিটুর মালদহ জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিনহা বলেন, “খুব মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। আমাদের নেতৃত্ব পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছে। আমরা শ্রমিকের পরিবারের পাশে রয়েছি। রাজ্যে কাজ নেই বলেই এই ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে মালদহে। তাদের কোনও নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি।অবলম্বে রেলকে মৃত শ্রমিক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি না দেয় আমরা প্রতিবাদে নামব।” মালদহ জেলা আইনটিটিইউসির সভাপতি শুভদীপ সান্যাল বলেন, “শ্রমিক মৃত্যু দুঃখজনক ঘটনা। কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। কী করবেন, তাই তাদের বাইরে কাজে যেতে হচ্ছে। আমরা সবরকমভাবেই পাশে রয়েছি।” দক্ষিণ মালদহের বিজেপির সাধারন সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ী বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনা। বাম- কংগ্রেস-তৃণমুল মৃত্যু নিয় রাজনীতি করছে। এটা উচিত নয়। কেন্দ্রীয় সরকার যথাসাধ্য ব্যবস্থা করছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.