বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: প্রেমের আবার বয়স আছে নাকি? কিন্তু তাই বলে একশ এক বয়সেও প্রেম? না। এটা কিন্তু একেবারেই অবিশ্বাসের মত কথা নয়। অন্তত রবীন্দ্রনাথ দে’র কাছে। গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে নিজের ৭০ বছরের পুরনো প্রেমিকাকে প্রেম নিবেদন করলেন তিনি। এবং এককথায় সেই প্রেমের ডাকে সাড়া দিয়েছেন প্রেমিকাও। ভ্যালেন্টাইনস ডে’র আগের দিনই তিনি উদযাপন করলেন তাদের ভ্যালেন্টাইনস ডে।
রবীন্দ্রনাথবাবুর প্রেমিকার বর্তমান বয়স ৮৫। আর প্রেমের বয়স ৭০ বছর বা তার কয়েক মাস বেশি। যদিও এই প্রেমের ধরনটা একটু আলাদা। প্রেমিকার নাম মঞ্জুরানি দেবী। সেই ৭০ বছর বা তার কয়েক মাস বেশি আগে এক ঝলক দেখা থেকেই শুরু হয়েছিল প্রেমের। দিন যত এগোতে থাকে, বাড়তে থাকে আকর্ষণ। যদিও প্রেমের পরশ লেগেছিল দু’জনের বিয়ের সময়। ৭০ বছর আগে বনগাঁর মেয়ে মঞ্জুকে রীতিমতো পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। নিয়ে এসেছিলেন নদিয়ার হাঁসখালি থানার গাজনার তেঁতুলবেড়িয়া গ্রামে নিজের বাড়িতে। এরপর থেকেই প্রেমের গভীরতা আর বাড়তে থাকে। সংসারের বন্ধনে বেঁধে জোয়ার ভাটার তালে তাল মিলিয়েও দু’জনে পরস্পরের হাত কিন্তু ছাড়েননি। দুই সন্তানের পিতা-মাতা হয়েছেন। ইতিবাচক-নেতিবাচক অনেক পরিস্থিতির সামনেই তাদের পড়তে হয়েছে। কিন্তু প্রেমের বাঁধন এতোটুকু আলগা হয়ে যায়নি। আর সম্ভবত সেটাই সবথেকে বড় মনের জোর রবীন্দ্রনাথবাবুর। ১০১ বছর বয়সেও এখনও তিনি বেশ চাঙ্গা। চশমা ছাড়াই এখনও দিব্যি খবরের কাগজ পড়েন।
ষাটের গণ্ডি অনেকদিন আগেই পেরিয়ে আসা রবীন্দ্রনাথবাবুর দুই ছেলে উৎপল দে এবং তরুণ দে বাবা-মায়ের অফুরন্ত মনের টানকে পরতে পরতে উপলব্ধি করেছেন। আর তাইতো, ১০০ বছর বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বাবা-মাকে আবার বিয়ের সাজে দেখতে মন চেয়েছিল দুই ছেলে, পুত্রবধূ, নাতি-নাতনি এবং তাদের ঘরের ছেলে মেয়েদের। পুত্র-পুত্রবধূরা জানিয়েছেন, “নাতি-নাতনিরা বাবাকে কথাটা বলতেই এককথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলেন বাবা। আর তাই, আমরা বাবা মায়ের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় বিয়ের মতই ছোটখাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। উদ্দেশ্য আমাদের মূলত একটাই, ওনাদের মনে কিছুটা আনন্দের বাতাস পৌঁছে দেওয়া। অবশ্য আনন্দ শুধু বাবা-মা পেয়েছেন, এমন নয়। এই বয়সে ওনাদের দু’জনের মনের অফুরন্ত টান দেখে আমরা সবাই আনন্দ পেয়েছি।
রবীন্দ্রনাথ দে’র বাড়িতেই বসেছিল বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। রীতিমতো মালা পরিয়ে সত্তর বয়সের পুরনো স্ত্রীকেই আবার নতুন করে করলেন ‘বিয়ে’। বাজল শঙ্খ, দেওয়া হল উলুধ্বনি। গোলাপ ফুল একে অপরকে দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে সত্তরতম বিবাহবার্ষিকী পালন করলেন রবীন্দ্রনাথবাবু। পাত পেড়ে খেলেন প্রতিবেশীরা। বৃহস্পতিবার নদিয়ার হাঁসখালি থানার গাজনার তেঁতুলবেড়িয়া গ্রামের লোকজনের কাটল অন্যরকম একটি দিন। ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে দেওয়া হয় মনপসন্দ খাবার। সদ্য যৌবনে পা দেওয়া রবীন্দ্রনাথ বাবুর নাতি-নাতনিরা বললেন, ‘সত্যিই এক অন্যরকম ভ্যালেন্টাইন ডে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.