সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: করোনার কোপ পড়ল চৈত্র শেষের চড়ক-গাজনের মেলাতেও! প্রান্তিক পুরুলিয়ায় রাজাদের আমলে শুরু হওয়া ঐতিহ্যবাহী শতাধিক চৈত্র মেলার ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কমিটিই। রীতিমত বিজ্ঞপ্তি জারি করে ভক্ত সমাগম বন্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র একজন করে পাটনি, ভক্তা ও পুরোহিত-সহ তিনজনকে নিয়ে নমো নমো করে সংক্রান্তির পুজো সারবে জেলার মেলা কমিটিগুলি। ফলে এই শতাধিক মেলায় যে হাজার হাজার ভক্তা এসে উপবাস থেকে শূন্যে পাক খান। সেই ছবিও এবার আর দেখা যাবে না। দেখা যাবে না মেলাকে ঘিরে ছৌ ও আলকাপের মত লোকশিল্পও। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, “এখন লকডাউন চলছে। ফলে কোথাও কোন ভিড় করার প্রশ্নই ওঠে না। তাই মেলা কমিটি গুলি নিজেদের মত করে নোটিশ দিয়ে মেলা বন্ধ রেখেছে।”
এই জেলায় চৈত্র সংক্রান্তির দু’দিন আগে থেকেই উৎসব শুরু হয়ে যায়। চলে বৈশাখের শেষ পর্যন্ত। শনিবার উপবাস থেকে ফলাহার দিয়ে পরবের সূচনা হয়। কিন্তু এবার উৎসবেই ছন্দপতন! এই জেলার সবচেয়ে বিখ্যাত চৈত্র মেলার আয়োজক পুরুলিয়া এক নম্বর ব্লকের চিড়কা গৌরিনাথধাম শিব মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে বিশেষ সূচনা দিয়ে জানানো হয়েছে, চিড়কা মন্দিরে চৈত্র মেলা (চড়কপূজা) উপলক্ষে ভক্ত সমাগম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। একই বিঞ্জপ্তি বাঘমুন্ডির লহরিয়া শিব পূজা কমিটিরও। শতাধিক বছরের এই পুরানো মেলা বাঘমুন্ডির রাজা শুরু করেন। ওই কমিটির সভাপতি শশীভূষণ মাহাতো বলেন, “আমাদের মেলায় ঝাড়খণ্ড থেকেও ভক্তারা আসেন। প্রায় তিনশো জন ভক্তা শূন্যে পাক খান। এবার সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভক্তাদের জন্য কোন খুঁটি পোঁতা হয়নি।” ফি বছরই পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকের শিহরি গ্রামে ভক্তা সাজেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হলধর মাহাতো। তিনি বলেন, “কী আর করা যায়! নিয়মেই কোপ পড়ল। মাত্র তিনজনের উপস্থিতিতে পুজো হবে এই যা।” ঝালদা দু’নম্বর ব্লকের বেগুনকোদরে রানি মা সেখানকার চৈত্র মেলায় সংক্রান্তির দুপুরে যে আলকাপ শুরু করেন এবার সেই লোকশিল্পও বন্ধ।
ছবি- অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.