তরুণকান্তি দাস: একদিকে রাজ্য৷ অন্যদিকে কেন্দ্র৷ যৌথ উদ্যোগে দ্রুত শিলিগুড়িগামী জাতীয় সড়কের কাজ শেষ করতে সমঝোতার পথে উভয়পক্ষ৷ বারাসত থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত যে সব জায়গায় জট রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে বারবার বৈঠকে রাজ্য৷ অন্যদিকে ডালখোলাও রায়গঞ্জের সমস্যা মিটিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করতে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিচ্ছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ৷ এবং এই ঝাঁ চকচকে সড়ক ধরে শিলিগুড়ি পৌঁছতে টোলপ্লাজা কোথায় কোথায় বসবে তার স্থানও ঠিক হয়ে গিয়েছে৷
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, কমপক্ষে দশটি টোলপ্লাজা হচ্ছে এই রাস্তায়৷ কলকাতা থেকে জাতীয় সড়ক ধরে গাড়িতে শিলিগুড়ি পৌঁছতে প্রায় হাজার টাকা টোল ট্যাক্স লাগবে৷ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত রাজ্য পূর্ত দফতর ও বাকি অংশটুকুর কাজ করবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু পরে পুরোটাই যেহেতু কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রালয়ের হাতে আসবে তাই টোল প্লাজা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তারাই৷ সেই মোতাবেক প্রাথমিকভাবে কোথায় কোথায় টোল প্লাজা বসবে তা ঠিক হয়েছে৷ তার জন্য পরিকাঠামো বজায় রেখেই রাস্তার কাজ হবে৷ তবে এখনও পর্যন্ত চাকদা, আমডাঙা, বিরহী, ফুলিয়ার মতো এলাকার জমি জট কাটেনি৷ ফলে কাজ শেষ হতে সময় লাগবে৷ রাজ্য এ নিয়ে কোনও ঢিলেমি চায় না৷
কেন্দ্রের আশা ছিল, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে উত্তরবঙ্গগামী জাতীয় সড়ক ছয় লেন করার কাজ৷ কিন্তু নানা সমস্যার জেরে তা হয়নি৷ কিছুদিন আগে রাজ্য এগিয়ে এসে বিমানবন্দর থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত কাজের দায়িত্ব নেয়৷ তবে সমস্ত জটিলতা এখনও কাটিয়ে ওঠা যায়নি৷ এদিকে আগে এই অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা আইনের পথে হেঁটে সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ যদিও রাজ্য চায় দ্রুত কাজ শেষ করতে৷
তবে ডালখোলা, ইসলামপুর বাইপাস ও রায়গঞ্জে যে সমস্ত স্থানে জমি-জট রয়েছে তার সমাধানের উদ্যোগের পাশাপাশি বাকি অংশে এখন কাজ চলছে দ্রুত গতিতে৷ কিন্তু এখনই মানুষের প্রশ্ন, ক’টি টোলপ্লাজা বসবে, কতগুলি স্থানে রোড-ট্যাক্স গুনতে হবে এই সড়কে? তা ছাড়া ঠিক কোথায় কোথায় রাস্তার জমি নিয়ে সমস্যা কাটেনি? প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে দশটি টোলপ্লাজা থাকছে৷ এখন ডালখোলা পর্যন্ত চারটি টোলপ্লাজা রয়েছে৷ তা বেড়ে হবে সাতটি৷ অর্থাৎ নতুন তিনটি স্থানে কর দিতে হবে গাড়িগুলিকে৷ ডালখোলা থেকে শিলিগুড়ি দু’টি টোলপ্লাজা আছে৷ বারাসতের লাগোয়া ময়না বা বেথুয়াডহরিতে নতুন টোলট্যাক্স আদায়ের পরিকাঠামো গড়া হচেছ৷ অর্থাৎ কলকাতা থেকে যাত্রা শুরুর পর প্রথম বেথুয়াডহরি বা বারাসাতেই সড়ক-কর দিতে হবে বলে জানাচ্ছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তা৷ দূরত্ব অনুযায়ী কর আদায়ের যে নীতি রয়েছে সেটাই লাগু হবে৷ এবং সব মিলিয়ে প্রায় এক হাজার টাকা লাগবে সড়ক-কর৷
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তা বলেন, বারাসাতে রেলগেটে ফ্লাইওভার হবে না কি আন্ডারপাস সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ এখানে জমি পেতে গেলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে হাত পড়বে৷ ভাঙা পড়বে বেশ কিছু বাড়ি৷ তাছাড়া রেলের রেক খালি করা হয় যেখানে, সেই পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ তবে রাজ্য বিষয়টিতে হাত দেওয়ার পর ধীরে ধীরে সমস্যা কাটছে৷
এই জাতীয় সড়ক প্রায় ৪৪৩ কিলোমিটার পার করে ডালখোলায় গিয়ে সংযুক্ত হবে ৩১ নম্বরে৷ যা যাবে শিলিগুড়ি পর্যন্ত৷ বারাসত, কৃষ্ণনগর, পলাশি, বহরমপুর, মোরগ্রাম, জঙ্গিপুর, ফরাক্কা, ইংরেজবাজার, রায়গঞ্জ, করণদিঘি হয়ে পৌঁছবে ডালখোলায়৷ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ কাজের সুবিধার জন্য এটিকে কয়েক ভাগে ভাগ করেছে৷ কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগর, সেখান থেকে বহরমপুর হয়ে ফরাক্কা (১০৩ কিমি), ফরাক্কা থেকে রায়গঞ্জ (১০৩ কিমি), রায়গঞ্জ থেকে ডালখোলা (৫০ কিমি)৷ এর মধ্যে নদিয়া, বহরমপুর, ইসলামপুর ও ডালখোলায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিয়েছিল৷ বিল্ট অন ট্রান্সফারের ভিত্তিতে প্রকল্পটি গড়া হবে বলেই কমপক্ষে দশটি স্থানে টোলপ্লাজা বসতে চলেছে৷ তবে কোন গাড়ির জন্য কোথায় কত কর দিতে হবে তা ঠিক হবে কাজ শেষ হওয়ার পর৷ দূরত্ব অনুযায়ী৷ তা অবশ্য যাবে বেসরকারি হাতে৷ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক কর্তা বলেন, এ জন্য নির্দিষ্ট কমিটি আছে৷ তার সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করছি আমরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.