দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: জ্যৈষ্ঠের ভ্যাপসা গরমেই জামাইদের সুস্বাস্থ্য ও কুশল কামনা করেন শাশুড়িরা। আর এই দিনটিকেই বাংলায় মহা সমারোহে জামাই ষষ্ঠী রূপে পালন করা হয়। অন্য বছরগুলি জাঁকজমক করে পালন হলেও এবার বাঁধ সেধেছে করোনার আক্রমণ। সঙ্গে দোসর হয়েছে আমফানের ক্ষত। জোড়া আক্রমণের জেরে বাজারে অমিল মাছ-মাংস থেকে সুস্বাদু ফল। তবে তালপাতার পাখার হাওয়া আধুনিক যুগে বেমানান হলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট ফিরিয়ে এনেছে সেই পুরোনো রীতিকে। তাই এবারে জামাই ষষ্ঠীর আপ্যায়নে থেকে যাবে বিস্তর ঘাটতি।
লকডাউন ও আমফানের জোড়া ফলায় জেরবার বাংলার বাজার। এই বছর জামাইদের সেবায় পাঁচমেশালি ফল, মিষ্টি ও ঠান্ডাপানীয়ের সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজের এলাহি আয়োজনেও ঘটবে ছন্দপতন। জেলার এক ফল ব্যবসায়ী মোসলিম সেখ জানালেন, “মালদা থেকে জামাই ষষ্ঠীর আম আসার কথা ছিল। কিন্তু আসেনি। আমফানের তাণ্ডবে ঝড়ে পড়েছে সব আম। ফলে ল্যাংড়া, চৌসা, হিমসাগরের মত আমগুলির জোগান বাজারে খুবই কম। এবছর যা আসছে পুরোটাই কার্বাইডে পাকানো। কার্বাইডে পাকানোর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমের স্বাদ-গন্ধ।” এই আম শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক বলেও দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাজারে জোগান বজায় রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীরা এই আমই বাজারজাত করছেন। প্রতিবছর এই সময় তুঙ্গে থাকে লিচু, জামরুল, কাঁঠাল, জামের চাহিদা। আমফানের জেরে মাত্র একদিনেই তছনছ হয়ে গেছে বারুইপুরের বোম্বাইয়ের লিচুর বড় বাগানগুলি। ঝরে পড়েছে সমস্ত লিচু। ফলে আকাল দেখা দিয়েছে লিচুর। বারুইপুরের জামরুল ব্যবসায়ী স্বপন নস্কর বলেন, “বড় বড় জামরুল গাছে প্লাস্টিকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। সেই প্লাস্টিকের মধ্যেই জামরুল পচে যাচ্ছে। আর যে পরিমাণে ফল গাছ থেকে ঝড়ে পড়েছে যে বাজারজাত করলেও তা বিক্রি হচ্ছে না।” কিছু ব্যবসায়ীর দাবি যে পাইকারি ফলের দাম আকাশছোঁয়া।
এতো গেল ফলের বাজার মাছ-মাংসের বাজারের অবস্থাও তথৈবচ। লকডাউন বাংলাদেশ থেকে এবার ইলিশ আসেনি পশ্চিমবঙ্গে। তাই ইলিশের পরিবর্তে চিংড়ি, ভেটকির ভেড়িগুলিও ভেসে গিয়েছে জলের তোড়ে। আগুন দাম পাবদা, চিতল মাছ, মুরগি ও কচি পাঁঠার মাংসের। সব মিলিয়ে জামাইয়ের পাতে কী তুলে দেবেন সেই ভেবেই মাথায় হাত পড়েছে শ্বশুর-শাশুড়ির। ন্যূনতম আপ্যায়নেই ওষ্ঠাগত প্রাণ হচ্ছে তাঁদের। তাই এই বছরটা শুধুমাত্র মিষ্টিমুখ করে ফোঁটা নিয়েই কাজ সারতে হবে জামাইদের। তবে তাদের দুঃখে প্রাণ ঠান্ডা করবে শুধুমাত্র তালপাতার পাখার শীতল হাওয়া। আমফানের জেরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এই সম্মানটুকু বাঁচাবে। সেই হাওয়া খেয়েই মনে মনে বলতে হবে, আসছে বছর আবার হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.