সুকুমার সরকার, ঢাকা: চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনায় মিলল নয়া তথ্য। কমান্ডো অভিযানে নিহত ছিনতাইবাজ যুবক মাহমুদের হাতে খেলনা পিস্তল ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এক নায়িকার প্রেমে ব্যর্থ হয়ে তার এই কার্যকলাপ বলে জানা গিয়েছে। চট্টগ্রাম পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, প্রথমে গুলি না চালিয়ে ছিনতাইবাজ যুবককে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয় কমান্ডোদের তরফে। কিন্তু সে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করায় শুরু হয় গুলিযুদ্ধ। তবে বিমানের ভিতরে কোনো বিস্ফোরক পাওয়া যায়নি।
মাহমুদ মানসিকভাবে খুব সুস্থ নয় বলে জানা গিয়েছে। সোনারগাঁওয়ের দুধঘাটা গ্রামের বাসিন্দা বছর তেইশের মাহমুদ পলাশ। ২০১৮ সালে কলেজ ভরতি হওয়ার পর তার সিনেমায় অভিনয় করার ইচ্ছে হয়। ইচ্ছাপূরণ করতে ঢাকায় চলে যায় পলাশ। সেখানেই শিমলা নামে এক অভিনেত্রীর প্রেমে পড়ে এবং কয়েকমাস পর তাকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে শিমলার সঙ্গে সমস্যা হয়। যার জেরে বাড়ি ফিরে যায়। এবার সে বাবা,মা-কে জানায়, দুবাই যাবে চাকরি খুঁজতে। কিন্তু তারপরই এই ঘটনা ঘটায়।রবিবারের ঘটনার তদন্তে বেসামরিক বিমান মন্ত্রকের সহকারী সচিব জনেন্দ্র নাথকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছেন বাবা,মা।
[চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা, কমান্ডো অভিযানে নিহত বন্দুকবাজ]
রবিবারের অপহরণ আতঙ্ক কাটিয়ে আজ বিডি ১৪৭ বিমান ময়ূরপঙ্খীতেই যাত্রীদের দুবাই যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতে যাত্রীদের নিরাপদে উদ্ধার করে চট্টগ্রামের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। রাতেই দুবাইগামী অন্য বিমানে তাঁদের পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘন কুয়াশার কারণে রাতের উড়ান বাতিল করা হয়েছে। আজ সকালে নতুন বিমানে ১৪২ জন যাত্রী এবং কেবিন ক্রু-রা দুবাই যাচ্ছেন।
তবে রবিবার চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে ককপিটে বন্দুক নিয়ে ঢুকে, জরুরি অবতরণ করিয়ে যেভাবে এক যুবক আতঙ্ক তৈরি করেছিলেন, তারপর বাংলাদেশের বিমান পরিবহণে নিরাপত্তা ফের বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে। খেলনা পিস্তল হলেও, ছিনতাইকারী মাহাদি কীভাবে তা নিয়ে বিমানে উঠলেন, এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের সূত্র বলছে, ঢাকার শাহ জালাল বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানের। তবে সেখানে আন্তঃরাজ্য বিমান চলাচলও করে। সেক্ষেত্রে ডোমেস্টিক বিমানযাত্রীদের প্রবেশপথে ততটা পরীক্ষা করা হয় না। সাধারণ স্ক্যানারে পরীক্ষা করিয়েই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। দেহ তল্লাশি হয় না। যদিও আন্তর্জাতিক টার্মিনালে যেতে হলে, দু দফায় বড়সড় নিরাপত্তার জাল পেরোতে হয় যাত্রীদের। অনুমান, ডোমেস্টিক টার্মিনালের ওই ফাঁক গলেই বিমানবন্দরে ঢুকে পড়েছিল মাহাদি। বাংলাদেশের বিমান পরিষেবায় নিরাপত্তার অভাব রয়েছে – উল্লেখ করে ২০১৬ সালে ব্রিটেন বাংলাদেশের সঙ্গে কার্গো চলাচল বন্ধ করে দেয়। সম্প্রতি রাজধানী শহর হওয়া সত্ত্বেও ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো। সেই সুযোগেই স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালানকারীদের খোলা পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে শাহ জালাল বিমানবন্দর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.