সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার (Khaleda Zia) ছোট ছেলেরও নাম জড়াল দুর্নীতিতে। আর তার সঙ্গে উঠে এল চিনের মারাত্মক দুর্নীতিপরায়ণতার কথাও।
বুধবার চিন (China) নিয়ে ওয়াশিংটনে টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বাংলাদেশের বিদেশ ও বাণিজ্য দপ্তরের দুই আধিকারিক। বিষয় ছিল চিনা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আমেরিকার বাণিজ্য দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা এবং চিনের নির্দিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা। সেই বিষয়ে বলতে গিয়েই চিনা সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। আর তা স্থান পেয়েছে আমেরিকার (USA) বিদেশ দপ্তর থেকে প্রকাশিত ট্রান্সক্রিপ্টেও।
কোকোর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আগেও তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি সেখানকার বিচার বিষয়ক দপ্তর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঘুষের প্রায় ৩০ লক্ষ ডলার বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগের কথা জানিয়েছিল। তাদের তথ্য অনুযায়ী, সিমেন্স এজি এবং চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে এই ঘুষ লেনদেন হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে কনটেনার টার্মিনাল নির্মাণের ঠিকাদার নিয়োগেরর জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে কোকো চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ নেন। এই সংস্থা কাজটি পেয়েছিল ২০০৫ সালে। ২০০৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন কোকোর বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই মামলায় ২০১১ সালে আদালত কোকোকে ছ’বছরের কারাদণ্ড দেন।
অর্থপাচারের অভিযোগে ২০০৭ সালে তদারকি সরকারের আমলে কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই কোকো প্যারোলে মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যান। এরপর তিনি প্যারোলের শর্ত ভেঙে পাড়ি জমান মালয়শিয়ায়। শর্ত ভাঙায় বাংলাদেশ সরকার প্যারোল বাতিল করলেও কোকো জীবিত অবস্থায় আর দেশে ফেরেননি। কোকো ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়াতেই মারা যান।
চিনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা ও দুর্নীতির উদাহরণ দিতে গিয়ে আমেরিকার বিদেশ দপ্তরের বর্ষীয়ান আধিকারিক বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, একজন আধিকারিককে ঘুষ দেওয়ায় বাংলাদেশে সিসিসিসির সাবসিডিয়ারি চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিকে প্রকল্পগুলোর জন্য কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের আদালত একজন বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির ঘুষ দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন। এরপর আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, চিনা সংস্থাগুলো দেশের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে খুব নিবিড়ভাবে কাজ করে। দক্ষিণ চিন সাগর, জিবুতি বন্দর ও অন্যান্য স্থানেও এই একই ছবি দেখা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.