সুকুমার সরকার, ঢাকা: প্রেমের টানে ধর্ম বদল করে জার্মানকন্যা হলেন বাংলাদেশি বধূ। শুধু তাইই নয়, ভিনদেশে বিয়েতে কোনও আচার-অনুষ্ঠান হয়নি বলে প্রথম বিবাহবার্ষিকী পালন করতে সুদূর জার্মানি (Germany) থেকে চলে এলেন বাংলাদেশে (Bangladesh)। তরুণীর নাম আলিসা থেওডোরা পিত্তা। আর যাঁর জন্য তিনি সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এসেছেন, তিনি হলেন বরিশালের চরবাড়িয়া ইউনিয়নের রাকিব হোসেন শুভ। শুক্রবার বিকেলে নববধূকে নিয়ে ঢাকার (Dhaka) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন শুভ। শনিবার সকালে হেলিকপ্টারে বরিশালে যান। বিদেশি বধূ নিয়ে আসার খবর পেয়ে দল বেঁধে তাঁদের স্বাগত জানাতে সেখানে পৌঁছে যান গ্রামবাসী। পরে নববধূকে ফুল দিয়ে বরণ করেন শুভর স্বজনরা।
শুভ কাজের সূত্রে জার্মানিতে রয়েছেন বেশ কয়েক বছর। রেলওয়ে ডিপ্লোমা পাস করে ২০১১ সালে জার্মানিতে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে সিটি রেলওয়ে সার্ভিসের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ নেন। শুভ যেখানে থাকতেন, সেই এলাকারই বাসিন্দা আলিসা। উভয়ের মধ্যে আলাপ থেকে প্রেম, সেখান থেকে বিয়ে। জার্মানিতে শুভ-আলিসার বিয়ের অনুষ্ঠান করা হয়নি। আর তাই যুগলের পরিকল্পনা ছিল, প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে (Marriage Anniversary) শুভর গ্রামের বাড়ি গিয়েই পালন করবেন। কারণ, তাতে জার্মানি তরুণীও বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন।
সেই আশাপূরণ করতে শুভ সস্ত্রীক চলে আসেন দেশের বাড়িতে। বরিশালের চরবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামি লিগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের ছেলে রাকিব হোসেন শুভ। স্ত্রী আলিসা পেশায় নার্স। তাঁর বাবা ও মা সেখানে চাকরিজীবী। শুভ বলেন, ”গত বছরের ৫ মার্চ এলিসা ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে আলিসা বেগম হিসেবে আমার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শনিবার আমাদের বিবাহবার্ষিকী। তাই শুক্রবার জার্মানি থেকে রওনা হয়ে বাংলাদেশে আসি। শনিবার সকালে পৌঁছাই বরিশাল বিমানবন্দরে। এরপর হেলিকপ্টারে আলিসাকে নিয়ে বাড়ি ফিরি। আলিসার সঙ্গে এসেছে তার বান্ধবী লেইসা।”
শুভ বলেন, ”জার্মানিতে একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় প্রায়ই আলিসার সঙ্গে দেখা এবং কথা হতো। এভাবে কিছুদিন চলার পর আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে সম্পর্ক চলে অনেকদিন। দুজনই বুঝতাম, আমাদের মধ্যে ভালবাসা জন্ম নেওয়ার বিষয়টি। কিন্তু প্রস্তাব কে আগে দেবে, এটি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। বিষয়টি মাথায় রেখে দুজন-দুজনকে আরও বোঝার চেষ্টা করলাম। যখন বুঝলাম, আলিসা আমাকে মনেপ্রাণে চায়। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম প্রস্তাব দেওয়ার।” আলিসাও এই প্রস্তাবের অপেক্ষায় ছিলেন। এরপর শুভ নিজের পরিবারকে আলিসার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা জানান। আলিসাও তাঁর পরিবারকে এ নিয়ে অবগত করেন। দুই পরিবারের সম্মতি মেলে। কিন্তু বিয়ের আগে যে আলিসাকে ধর্ম বদল করে ইসলাম ধর্মে পরিবর্তিত হতে হবে! তাতেও সাগ্রহে রাজি হয়ে যান জার্মানি তরুণী। শুভ-আলিসার বিয়ে সুসম্পন্ন হয়।
আর বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান মহা ধূমধামে হয়ে গেল বরিশালে (Barishal)। আলিসা বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে মুগ্ধ। তাঁর আর শুভর আবদারে বাড়ির সকলে মিলে নতুনভাবে বিয়ের আয়োজন করেছেন। সেই অনুষ্ঠান সূচিও বেশ দীর্ঘ। শুভ জানাচ্ছেন, ”আগামী ৯ মার্চ আমাদের গায়ে হলুদ। ১০ মার্চ গ্রামবাসীর জন্য বউভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।” শুভর বাবা, চরবাড়িয়া ইউনিয়নের শাসকদল আওয়ামি লিগের (Awami League)সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ”ছেলে বিদেশে বিয়ে করেছে, সেখানেই থেকেছে এতদিন। অনেক দিন পর পুত্রবধূকে নিয়ে দেশে ফিরেছে। গ্রামবাসী ও আত্মীয়স্বজনকে ছেলের বিয়েতে দাওয়াত দিতে পারিনি। এ জন্য গায়েহলুদ ও বউভাতের আয়োজন করেছি। তাদের বিয়েতে আমি অনেক খুশি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.