সুকুমার সরকার, ঢাকা: ‘প্রগতিকে দাও গতি’ –আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এই স্লোগান তৈরি করেছেন ওপার বাংলার নারীরা। আর গতি দিতেই জলে নামলেন বরিশালের মহিলারা। শুক্রবার দেশজুড়ে একাধিক অনুষ্ঠান চললেও, নজর কাড়ল সন্ধ্যা নদীতে মহিলাদের বাইচ প্রতিযোগিতা। নারী জাগরণের আহ্বান জানিয়ে দেশের দক্ষিণে বরিশালের পয়সার হাটে হয়ে গেল অনুষ্ঠান। ধর্ম, শ্রেণি নির্বিশেষে পদ্মাপাড়ের নারীরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করলেন এই বাইচ বাওয়া। স্থানীয় কদমবাড়ি, রাজাপুর, ত্রিমুখী,পয়সার হাট-সহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মহিলাদের ১২টি দল অংশ নেন এতে। সন্ধ্যা নদীর দেড় কিলোমিটার জুড়ে বাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে পাড়ে ভিড় জমিয়েছিলেন অসংখ্যা মানুষ। ছিলেন বিদেশিনীরাও। জয়ী প্রতিযোগীকে পুরস্কার নয়, বরং এভাবেই প্রতি ক্ষেত্রে নারীর সমানাধিকারের বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার এই আয়োজনই অনেক বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন প্রগতিশীল ব্যক্তিবর্গ।
২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছর বরিশালের আগৈলঝাড়ার এই সন্ধ্যা নদীতে বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে ‘তরঙ্গ’ নামে স্থানীয় এক সংস্থা। নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐতিহ্যবাহী এই অনুষ্ঠান ঘিরে অংশগ্রহণকারীরাও বেশ উৎসাহী ছিলেন। আজকের সময়ে মহিলাদের এই সাফল্যের জন্য এদিনের অংশগ্রহণকারীরা যদিও তাঁদের জীবনের পুরুষদেরই কৃতিত্ব দিয়েছেন। কেউ নিজের বাবা, কেউবা স্বামীদের সাধুবাদ জানিয়েছেন। এমন উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তুলনায় অনেকটা এগিয়ে থাকা এই প্রান্তিক নারীদের অধিকারের বার্তা পৌঁছাবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন ‘তরঙ্গ’ সংস্থার অন্যতম উদ্যোক্তা সুভাষ সমদ্দার।
[হিরো আলমকে শ্রীঘরে পাঠাল আদালত]
এদিকে চলতি বছর বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে দুটি বিশেষ রং নির্ধারিত হয়েছে – বেগুনি এবং সাদা, যা নারীর প্রতীক। বেগুনি রঙ নির্দেশ করে সুবিচার ও মর্যাদা, যা দৃঢ়ভাবে নারীর ক্ষমতায়ন। ১৯৮৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ লেখিকা এবং নারীবাদী অ্যালিস ওয়াকারের উপন্যাস ‘দ্য কালার পারপল’ বইয়ের অনুপ্রেরণায় এই রঙ নির্ধারিত হয়েছে বলে জানাচ্ছে মহিলা সংগঠনগুলি। এই বইতে তিনি নারীদের অধিকারের কথা তুলে ধরেছেন। ধারণা করা হয়, সেখান থেকেই নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গে জুড়ে গেছে বেগুনি-সাদা রঙ। আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবসকে স্মরণ করে ‘ধর্ষণ-যৌন নিপীড়ন-ভীতি রোখো’, ‘আসুন, নারীর আত্মমর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হই’- এই সমবেত আহ্বানে শুক্রবার পদযাত্রা হয় ঢাকা। র্যালিটি পলটন মোড়, শহিদ মতিউল কাদের চত্বর ঘুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। নারী দিবস ও নারী সংহতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ বলেন, ‘নারী সংহতি মানুষ হিসেবে নারীর আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই করছে শুরু থেকেই। পরিসংখ্যানে নারীর অবস্থানের অনেক উন্নতির কথা জানা যায়। কিন্তু বাস্তবে এত ক্ষমতায়নের মধ্যেও নারী-পুরুষের পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা কাঠামোর কোনো পরিবর্তন হয়নি।’ নারী সংহতির প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক কানিজ ফতেমার কথায়, ‘ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে, গণপরিবহণ-সহ সব ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.