সুকুমার সরকার, ঢাকা: হিন্দু না মুসলমান? মিলছে না প্রশ্নের উত্তর। তাই সাত বছর ধরেই মর্গে পড়ে রয়েছে এক ব্যক্তির মৃতদেহ। শুনতে অবাক লাগলেও ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশে (Bangladesh)।
জানা গিয়েছে, খোকন নন্দী ওরফে খোকন চৌধুরী ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী। প্রথম স্ত্রী মীরা নন্দীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ না করেই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখেননি খোকন। ধর্মান্তরিত হওয়ার চার বছর পর শরিয়ত মতে হাবিবা আকতার খানম নামের এক মহিলাকে বিয়ে করেন তিনি। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়েই দিন অতিবাহিত করছিলেন খোকন। কিন্তু বিপত্তি বাধে ২০১৪ সালের জুনে। ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় খোকনের। তবে তার মরদেহের কোনও গতি হয়নি। দুই ধর্মের দুই স্ত্রী খোকনের লাশের দাবি করেন। বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। তবে মীমাংসা না হওয়ায় দীর্ঘ সাত বছর ধরে মর্গে রয়েছে খোকনের দেহ। মৃতদেহটি প্রথমে বারডেম হাসপাতালের মর্গে ছিল। সেখানে দীর্ঘ মেয়াদে লাশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় আদালতের আদেশে মরদেহটি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গের ডিপ ফ্রিজে। খোকনের মৃত্যুর পর দুই স্ত্রী নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী স্বামীর সৎকারের ব্যবস্থা করতে চাইছেন।
২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর আদালত বারডেম জেনারেল হাসপাতালের তদারকিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মরচুয়ারিতে খোকনের দেহ সংরক্ষণের আদেশ দেয়। এরপর ১৫ নভেম্বর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গ লাশটি গ্রহণ করে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গের সহকারী সেকান্দার আলী জানান, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে লাশটি আমাদের এখানে রয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বারডেম কর্তৃপক্ষ ব্যাগে ভরে লাশটি আমাদের কাছে দিয়ে গিয়েছে। ডিপ ফ্রিজে রাখা আছে।” খোকনের দ্বিতীয় স্ত্রী হাবিবা আখতার খানম বলেন, “আমার স্বামী মুসলমান। আমি চাই মুসলিম মতে সৎকার করতে। মুসলমান হিসেবে মারা গেলে দ্রুত লাশ দাফন করার নিয়ম। আমার স্বামীর লাশ মর্গে আছে প্রায় সাত বছর।” উল্লেখ্য, খোকন চৌধুরী প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৯৮০ সালে মুসলমান হন। ১৯৮৪ সালে হাবিবা আখতারের সঙ্গে খোকন চৌধুরীর বিয়ে হয়। হাবিবা আখতার খানম নিঃসন্তান। এখন মামলাটি চলছে ঢাকা সহকারী জজ আদালতে।মূলত সংঘাত বেঁধেছে খোকনের সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে। রাজধানী ঢাকার ফার্মগেটে খোকনের একটি মার্কেট রয়েছে। ওই মার্কেটের ভাড়া তোলা ও সম্পত্তি নিয়েই এই লড়াই বলে অভিযোগ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.