কৃষ্ণকুমার দাস: ফের দাপটে বাংলাদেশে ক্ষমতায় শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)। মুজিবকন্যার করিশ্মায় কার্যত নিশ্চিহ্ন বিরোধীরা। ৩০০ আসনের সংসদে আওয়ামি লিগ জিতেছে ২২২টি আসন। দলেরই ‘ডামি’ প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রতীকে দলীয় সরকারি প্রার্থীদের হারিয়ে দিয়ে জিতেছেন আরও ৬২ আসন। সব মিলিয়ে ২৮৪ আসন দখলে আওয়ামি লিগের। ঐতিহাসিক জয়ের পর একাধিক বিদেশি সংবাদমাধ্যম হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বকে কুর্নিশ জানাচ্ছে। তিনি পঞ্চমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রিত্বে আসায় খুশি দিল্লি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, আর কতদিন ক্ষমতায় থাকবেন নেত্রী? তারচেয়ে বড় প্রশ্ন, ৭৮ বছরের হাসিনার পরে কে?
ভোটের আগে আমেরিকা, চিন, ইংল্যান্ড বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে হাসিনার তীব্র সমালোচনা করলেও ভারত পাশে থেকেছে। ভোটে জিতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও। মুক্তিযুদ্ধ থেকে এবারের ভোটযুদ্ধে ভারতের পাশে থাকার কথা উল্লেখ করে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধু-কন্যা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৫ সালে বাবাকে সপরিবার খুন করার পর বন্ধু ভারত আমাদের আশ্রয় না দিলে বেঁচে থাকতাম না। ওঁদের সঙ্গে কিছু দ্বিপাক্ষিক সমস্যা আছে, সেগুলি সবই আলোচনা করে মিটিয়ে নেব।’’
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও (PM Narendra Modi) সরাসরি ফোন করে চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য হাসিনাকে ফোন করে অভিনন্দন জানান। বিনিপি, জামাতের ভোট বয়কটের বিষয়টি সম্পূর্ণ উড়িয়ে টুইটে মোদি বার্তা দেন, ‘‘সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হওয়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ। আর এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই আমাদের দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্ব আরও মজবুত করবে।’’
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আক্ষরিক অর্থেই রক্তে গড়া। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে প্রাণ আহুতি দেন তিন হাজার ভারতীয় জওয়ান। সেসমস্তই মুজিবকন্যা জানেন। দিল্লি পাশে না থাকলে পিতৃহন্তা রাজাকররা আবারও মাথাচাড়া দেবে এটাও তাঁর থেকে ভালো কে বোঝে। তাই ভারতকে পাশে নিয়েই চলায় বিশ্বাসী তিনি। ২০২২ সালে ভারত সফরে এসে বলেছিলেন, “বাংলাদেশ কখনও ভারতকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান আমরা অস্বীকার করতে পারি না।”
অন্যদিকে বাংলদেশ শুধু ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নয়, বরং কৌশলগত অংশীদারও। এই কারণেই হাসিনাকেই আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চেয়েছিল ভারত। কারণ, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার মুসলমান প্রধান দেশটি সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে। নয়াদিল্লির উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, অসম-সহ উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলো। পড়শি দেশে আওয়ামি লিগের বদলে বিরোধী দল বিএনপি ক্ষমতায় এলে উত্তর-পূর্বের রাজ্যেগুলোতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছে দিল্লি। বাংলাদেশে পালাবদল হলে আলফা, এনএসসিএনের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো পড়শি দেশে ফের ঘাঁটি জমাবে। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে জেএমবি, আনসারুল্লা বাংলা টিমের মতো ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনগুলো। এছাড়াও ঢাকায় মুজিবকন্যার অনুপস্থিতিকে কাজে লাগাবে সুযোগসন্ধানি চিন।
দিল্লির সাময়িক নিশ্চিন্তি এই যে মুজিবকন্যা ফের ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু বয়স বয়েছে হাসিনার। ৭৮ বছরের শরীর আর কতদিন সঙ্গ দেবে? এই অবস্থায় পদ্মপাড়েও নবীন-প্রবীণ প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন হল, হাসিনার পরে কে? উত্তরে উঠে আসছি দুটি নাম। একজন হাসিনার বোন শেখ রেহানা (Sheikh Rehana)। অপর জন হাসিনাকন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (Saima Wazed)। এই বিষয়ে ধোঁয়াশা বেড়েছে হাসিনার এক মন্তব্যে। এক ঘনিষ্ঠজনকে সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “সময়ই ঠিক করে দেবে আমার পর কে।” সেই সময় ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে, মনে করছেন কেউ কেউ। তাঁদের আরও দাবি, বোন নয়, কন্যা পুতুলই হাসিনার যোগ্য উত্তরসূরি।
বাস্তবিক পুতুল ইতিমধ্যে নিজের যোগ্যতায় রাষ্টসংঘের দূত হয়ে নারী ও শিশুদের জন্য কাজ করছেন। আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যাপক কর্মকাণ্ডের জন্য বহুবার পুরস্কৃত হয়েছেন। জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনে হাসিনার সঙ্গী ছিলেন। সেখানে আলাদা করে চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের সময়ও মায়ের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল পুতুলকে। এছাড়া আসিয়ান সম্মেলনেও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহঃ শাহবুদ্দিন চুপ্পুর সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া সফরেও গিয়েছিলেন হাসিনাকন্যা। এভাবেই আন্তর্জাতিক স্তরের একাধিক মঞ্চে মেয়েকে এগিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। গত বছর জি-২- সামিটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময়েও উপস্থিত ছিলেন পুতুল। মায়ের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন তিনিও। মুজিব-নাতনির পুতুলের উপর নজর রয়েছে দিল্লির। তবে কি মেধাবী কন্যাই হাসিনার উত্তরসূরি? উত্তর রাখা আছে সময়ের বিশ্বস্ত লকারে। অপেক্ষাই একমাত্র চাবি!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.