সুকুমার সরকার, ঢাকা: সাধারণত প্রার্থীরা ভোট পেতে ভোটারদের টাকা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার হল এর ঠিক উলটো। ভোট দেওয়ার জন্য প্রার্থীকেই টাকা দিলেন ভোটাররা। এমনই নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটেছে বাংলাদেশে। মাঝে আর মাত্র একদিন। রবিবার ৭ অক্টোবর বাংলাদেশে বহু চর্চিত সাধারণ নির্বাচন। শুক্রবার শেষ হয়েছে নির্বাচনের প্রচারপর্ব। গতকাল প্রচারের শেষ সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থী ও সমর্থকরা। এর মাঝেই প্রকাশ্য এসেছে এই ব্যাতিক্রমী ঘটনা।
জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারপর্ব। এতদিন পর্যন্ত জোর কদমে প্রচার চালিয়েছেন বিভিন্ন দলের প্রার্থী ও সমর্থকরা। ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মাঝেই ঘটেছে প্রার্থীকে টাকা দেওয়ার ঘটনা। এই কাণ্ড লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের। সেখানে রকেট প্রতীকের নির্দল প্রার্থী আবদুস সাত্তার পালোয়ানকে ভোটের জন্য টাকা দিয়েছেন ভোটাররা। বুধবার রাতে ওই নির্বাচনী এলাকার কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাটে পথসভায় ভোটাররা সাত্তারকে ৫ হাজার ৬০০ হাজার টাকা দেন। এনিয়ে নির্দল প্রার্থী আবদুস সাত্তার বলেন, এ টাকা সামান্য হলেও তিনি জনগণের আশীর্বাদ হিসাবে তা গ্রহণ করেছেন। নজিরবিহীন এই ঘটনার আড়াই মিনিটের একটি ভিডিও ইতিমধ্যেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
অন্যদিকে, নির্বাচন রুখতে দেশে বিক্ষোভ-অবরোধ জারি রেখেছে বিএনপি-জামাত-সহ সমমনা মৌলবাদী দলগুলো। শুক্রবার বিএনপির (BNP) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভির নেতৃত্বে রাজধানী ঢাকায় লাঠি মিছিল করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিন সকালে ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকায় মিছিল করে তারা। সেই সময় ‘অবৈধ নির্বাচন মানি না মানব না‘, ‘ডামি নির্বাচন মানি না মানব না‘, ‘একতরফা নির্বাচন মানি না মানব না‘, ‘ভোট চোর, ভোট চোর, আওয়ামি লিগ ভোট চোর‘-এর মতো স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। মিছিলটি কাওরানবাজার মেট্রো স্টেশন থেকে শুরু হয়ে আশেপাশের রাস্তা ঘুরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। নিবাচনী কাজে সহায়তা দিতে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া চলবে।
নির্বাচনী আরচণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ১০ জন প্রার্থী, একজন উপজেলা চেয়ারম্যান-সহ ৬০ জনের বিরুদ্ধে ৫০টিরও বেশি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (EC)। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতেই ৪২টি মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেয় ইসি। এই ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪ জন আওয়ামি লিগের, ১ জন জাতীয় পার্টি এবং বাকিরা নির্দল প্রার্থী। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে নৌকার প্রার্থী আওয়ামি লিগের রাজশাহী-৪ আসনে আবুল কালাম আজাদ, নোয়াখালী-২ আসনে মোরশেদ আলম, চট্টগ্রাম-১৬ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান ও ঝিনাইদহ-১ আসনে আবদুল হাই, জাতীয় পার্টিও প্রার্থী মাগুরা-২ আসনের মহম্মদ মুরাদা আলি এবং নির্দল প্রার্থী জয়পুরহাট-২ আসনের গোলাম মাহফুজ চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের মহম্মদ আলি আসলাম, নোয়াখালী-২ আসনের আতাউর রহমান ভূঁইয়া, নেত্রকোনা-১ আসনের জান্নাতুল ফিরদৌস আরা ও মেহেরপুর-১ আসনে আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নির্দল প্রার্থী-সহ ও সমর্থকদের এখনও পর্যন্ত ৫৮৯টি শোকজ ও তলব নোটিস পাঠিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.