সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিজয় দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সোশাল মিডিয়া পোস্টে বেজায় ক্ষুব্ধ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। ১৯৭১-এ পাকিস্তানকে সম্মুখসমরে হারিয়েছিল ভারতীয় সেনা। জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। এদিন ঐতিহাসিক যুদ্ধজয়ে সেনার সেই অবদানের কথাই তুলে ধরেন মোদি। যদিও এই বক্তব্য পছন্দ হয়নি হাসনাতের। তাঁর দাবি, “এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।” কার্যত ৭১-এর যুদ্ধে ভারতের অবদানকে অস্বীকার করতে চাইলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ।
‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটি উচ্চারিত হলেই এসে যায় বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের নাম। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ–“সাত কোটি বাঙালিকে দাবায় রাখতে পারবা না।” এবং “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” বলা বাহুল্য, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষ বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। সেই মুজিবকে মুছে ফেলা হচ্ছে ইউনুসের বাংলাদেশে। মূর্তি ভেঙে, সংগ্রহশালা পুড়িয়ে, সিলেবাস ও মুদ্রা থেকে সরিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ও অবদানকে মিথ্যে করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। এই বাংলাদেশের নেতৃত্ব যে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানকে অস্বীকার করবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।
ঐতিহাসিক ১৬ ডিসেম্বরকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী মোদি সোমবার পোস্ট করেন, “আজ, বিজয় দিবসে, ১৯৭১ সালে ভারতের ঐতিহাসিক বিজয়ে অবদান রাখা সাহসী সেনাদের সাহস ও আত্মত্যাগকে আমরা সম্মান জানাই। তাঁদের নিঃস্বার্থ বলিদান ও অটল সংকল্প আমাদের জাতিকে রক্ষা করেছে এবং আমাদের গৌরব এনে দিয়েছে। এই দিনটি তাঁদের অসাধারণ বীরত্ব ও অদম্য চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁদের আত্মত্যাগ চিরকাল প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের জাতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
মোদির এই পোস্ট হজম হয়নি হাসনাতের। ফেসবুকে মোদির পোস্টের ক্রিনশট দিয়ে তিনি লেখেন, “এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু মোদি দাবি করেছে, এটি শুধু ভারতের যুদ্ধ এবং তাদের অর্জন। তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের অস্তিত্বই উপেক্ষিত।” হাসনাত আরও লিখেছেন, “যখন এই স্বাধীনতাকে ভারত নিজেদের অর্জন হিসেবে দাবি করে, তখন আমি একে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার প্রতি সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখি। ভারতের এই হুমকির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। এই লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে।”
বিশ্লেষকদের বক্তব্য, হাসনাতের এই বক্তব্য ভারতের প্রতি বাংলাদেশের অকৃতজ্ঞতার শামিল। কারণ যে ভারতের সাহায্য ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মই হত না, সেই দেশটি সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার প্রতি ভারত হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। আসলে এই বক্তব্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী পাকিস্তানপন্থী রাজাকারদের কণ্ঠস্বর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.