সুকুমার সরকার, ঢাকা: ফের অগ্নিগর্ভ ঢাকা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে বিএনপি-জামাত-সহ ইসলামপন্থী দলগুলো ফের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। তৃতীয় দফায় এই দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিন পার হচ্ছে। আগের অবরোধ কর্মসূচিগুলোর মতো আজ বুধবারও অবরোধকারীরা তাদের কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপকভাবে যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
জানা গিয়েছে, বুধবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই অবরোধ চলবে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত। এর আগে দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কমপক্ষে ২৩টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে দেশের উত্তর জনপদ জেলা বগুড়ায় জামাতের মিছিলে ‘পুলিশ ছররা গুলি’ চালিয়েছে এবং তাদের ১০ নেতাকর্মী জখম হয়েছে বলে দলটির দাবি। বগুড়া শহর জামাতের আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে দুশোর উপর নেতাকর্মী লাঠিসোটা হাতে মিছিল শেষে মহাসড়ক অবরোধ করে। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া চলে। পুলিশ জামাত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল ও শটগান থেকে ছররা গুলি ছোড়ে।
এদিকে, অবাধ-শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চেয়ে আমেরিকা-সহ পশ্চিম বিশ্বের চাপের মুখে নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের গুজব রয়েছে। অনিশ্চয়তার কথাও আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। এ অবস্থায় সব ধরনের অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচনের পথেই অগ্রসর হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ সরকার। অপরদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে আন্দোলন তীব্র করেই এগোতে চায়।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ ঘিরে হিংসার জেরে হঠাৎ করেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর পর থেকে প্রাণহানির পাশাপাশি প্রায় নিয়মিতভাবে জ্বালাও-পোড়াওয়ের কাণ্ড চলছে। চলমান আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করে বিএনপির নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, চলমান অবরোধ কর্মসূচির কারণে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় সারা দেশ থেকে সড়কপথে ঢাকা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। নৌপথেও যান চলাচল কমে গিয়েছে। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, সরকার ভাবছে বিরোধী দলকে তফসিলি ঘোষণা করে কাবু করবে। আসলে এটা একটি দুর্দশা মাত্র। আমরা দেখেছি তফসিলি ঘোষণার পর নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, তফসিলি ঘোষণার পরে যে নির্বাচন হওয়ার কথা তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও হিংসার কাণ্ডে ৮৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২ হাজার ১৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, আওয়ামি লিগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পালটা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে। প্রতিবাদ মিছিল ও শান্তি সমাবেশের মধ্য দিয়ে আওয়ামি লিগ নেতাকর্মীরা তাদের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে। দুপক্ষের এমন অনঢ় মনোভাবের কারণে পুলিশের সামনেই তারা হিংসায় জড়িয়ে পড়ছে। আওয়ামি লিগের এই কর্মসূচি জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত চলবে বলেও জানান তারা। দলীয় সভা-সমাবেশে আগামী নির্বাচনে নৌকার জন্য ভোটও চাইছেন দলের নেতাকর্মীরা। এরই অংশ হিসাবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডেকেছে দলটি। চারদিন সৌদি আরব সফর শেষে আজ সকালে ঢাকায় পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে বিএনপির আন্দোলন বাস্তবে যত গর্জে ততটা বর্ষে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘তাদের আন্দোলনের গতি দেখলে বোঝা যায় তারা যতটুকু জনগণের অংশগ্রহণ আশা করেছিল তা হয়নি। তারা এখন নিঃশব্দ মানববন্ধনে নেমে এসেছে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.