সুকুমার সরকার, ঢাকা: বিশ্ব মানচিত্রে ব্রাত্য তাঁরা। পৈশাচিক তাণ্ডবে ভিটেমাটি খুইয়ে শরণার্থী হয়ে কোনও মতে বেঁচে থাকা। বাংলাদেশে থাকা হিন্দু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আর্তিতে আজ কান পাতা দায়। অভিযোগ, মায়ানমারে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের হাতে থেকে কোনওক্রমে প্রাণ বাঁচালেও, বাংলাদেশে মৌলবাদীদের নিশানায় তাঁরা। সাহায্যে এগিয়ে আসেনি কেউই। এবার সেই উদ্বাস্তুদের পাশে দাঁড়াল রাষ্ট্রসংঘ।
[বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হিন্দুদের গণহত্যায় জড়িত ২২ রোহিঙ্গা জঙ্গি]
রবিবার কক্সবাজার জেলার কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং হিলি। শরণার্থীদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তাঁদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। এ মূহূর্তে বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ৬ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এরমধ্যে হিন্দু রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কয়েক হাজার। এদিন ইয়াং হিলি বালুখালি ১ নম্বর অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। সেখানে বেশ কয়েকজন মৌলবির সঙ্গে আলাপ করেন তিনি। মৌলবি আবদুল্লাহর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দূত হিলিকে মায়ানমারে সেনা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। তাঁদের অভিযোগ, রোহিঙ্গারা মায়ানমারে ফেরত গেলে বার্মিজ সেনারা বিভিন্ন অজুহাতে তাঁদের ওপর নির্যাতন চালাতে পারে। এ জন্য সেখানে রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধি দলের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, হিন্দু রোহিঙ্গাদের একাংশের অভিযোগ, বার্মিজ সেনা নয়, ইসলামিক জঙ্গিরা তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। তবে বাংলাদেশে আশ্রয় মিললেও মেলেনি নিরাপত্তা। ধর্মান্তকরণ ও ধর্ষণের মতো ঘটনার শিকার হয়েছেন তাঁরা। হামলার নেপূথ্যে থাকা ইসলামিক মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এক নিঃশ্বাসে মংডুর চিকনছাড়িতে ১০ বার্মিজ পুলিশকে নৃশংসভাবে হত্যার সেদিনের ভয়ানক দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব সুরধন পাল। তাঁর দাবি রাখাইনে সংঘর্ষের সূত্রপাত করে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা। তারপরই পালটা অভিযানে নামে সরকারি বাহিনী।
[হিন্দুদের হত্যা করে গণকবর দিচ্ছে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা: মায়ানমার সেনা]
কিন্তু কেন এমন নির্মম অমানবিক অসহিষ্ণু অত্যাচার? সবই কি বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মায়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর নির্মমতা? প্রশ্ন দু’টো শেষ করতে দেন না মংডুর ১০ একর জমির মালিক পালগোষ্ঠীর কুলপতি সুরধন। কিছুটা প্রতিবাদী ঢঙে পাল্টা প্রশ্ন করেন, “এক হাতে তালি বাজে? বাজে না। ‘আল-ই-খাইন’ জঙ্গিরা গত বছর পুজোর সময় থেকে ধারাবাহিকভাবে পুলিশ ও সেনা খুন করছিল। তারই জবাব এতদিনে দিতে শুরু করেছে বার্মিজ সরকার।” কিন্তু মায়ানমার সরকার তো এখন হিন্দু শরণার্থীদের দেশে ফিরতে বলছেন। কথাটা শুনে যেন একটু থমকে যান সুরধন। কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, থামিয়ে দিলেন বিজয়রাম। বললেন,“কাকা, যে দৃশ্য দেখেছেন তা নিয়ে এখনও আতঙ্কে আছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.