পারভীন পান্না ও নজরুল ইসলাম
সুকুমার সরকার, ঢাকা: তিনি একজন ডাকসাইটে জনপ্রতিনিধি। বর্তমানে তাঁরই এলাকার এক বক্তির সুন্দরী স্ত্রীকে জোর করে বিয়ে করায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশের উত্তর জনপদ জেলা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজন আহমেদের স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা গুলশানারা পারভীন পান্নাকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছেন উল্লাপাড়ার মেয়র এসএম নজরুল ইসলাম।
কিন্তু মেয়রের ভয়ে মামলা তো দূরের কথা, আজ পর্যন্ত কোথাও কোনও অভিযোগ করতে সাহস পাননি গুলশানারার স্বামী রাজন আহমেদ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উল্লাপাড়া উপজেলার সর্বত্র যখন সমালোচনার ঝড় বইছে। ঠিক তখনই সমুদ্র সৈকতে গিয়ে সদ্য বিবাহিত স্ত্রী পান্নাকে নিয়ে হানিমুন করেন মেয়র নজরুল। আর হানিমুন থেকে ঘুরে আসার পর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পুরসভা-সহ এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পান্নাকে নিয়ে যাতায়াত শুরু করেছেন তিনি।
তবে তাঁদের হানিমুনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হবার পর বিষয়টির সমালোচনা শুরু হয়েছে। এদিকে মেয়র নজরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই স্কুলে অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন গুলশানারা পারভীন পান্না। একদিনের ছুটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত তিনি। কিন্তু, পুরসভার মেয়রের স্ত্রী হওয়ায় কোনও বিহিত হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতেও নারাজ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উল্লাপাড়া পুরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম কয়েক বছর আগে ঝিড়িকা বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যান। ওই অনুষ্ঠানেই সহকারী শিক্ষিকা গুলশানারা পারভীন পান্নাকে দেখেন তিনি। তারপর থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পান্নাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু, তাঁর কথায় রাজি হননি পান্না। তখন ক্ষমতা ও গুণ্ডাদের ভয় দেখিয়ে তাঁকে অপহরণ করেন নজরুল। পান্নার স্বামী রাজন তাঁদের ১৬ বছর বয়সী সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে কোনও ঝামেলায় জড়াতে চাননি।
এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার দীর্ঘ ১৮ বছরের সংসার ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন মেয়র নজরুল ইসলাম। আমাদের একমাত্র সন্তান রয়েছে। ওর ভয়ে আমি কোনও ব্যবস্থা নিইনি। তবে নজরুলের মেয়র পদের মেয়াদ ফুরলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত কোনও জনপ্রতিনিধি অন্যের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করতে পারেন না। কারণ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা হচ্ছেন সকলের অভিভাবক। অথচ সেই অভিভাবকই যদি অন্যের স্ত্রীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন তাহলে সেই এলাকার জনগণ বিচার চাইবে কার কাছে? এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যদি স্থানীয় প্রশাসনকে দেওয়া হয় এবং তদন্তে অভিযোগটি প্রমাণিত হয়। তাহলে ওই জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করতে পারে সরকার।
এপ্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম। শুধু বলেন, ‘গুলশানারা পারভীন পান্না আমার স্ত্রী।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.