সুকুমার সরকার, ঢাকা: দারিদ্র্য এতটাই যে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই৷ আর তা জোগাড় করতে বাংলাদেশের গাইবান্ধার দুই ব্যক্তি যা করলেন, তা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী, বেদনাদায়ক৷ যৎসামান্য টাকার বিনিময়ে নিজেদের সন্তানদের বিক্রি করে মাথার উপর ছাদ গড়ে নিলেন৷ ঘটনা জানাজানি হতে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়৷
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা হাবিল মিঞা এবং আশরাফুল৷ হাবিল থাকে রাজবাড়ি গ্রামে, আর আশরাফুল উত্তর ধর্মপুরে৷ প্রথমজন নিজের তিন সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে৷ আর এবিষয়ে হাবিল বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ৷ জায়গা, জমি নেই৷ মানুষের জায়গায় থাকি৷ সেখানে থাকতেও দেয় না৷ বাচ্চাকে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে ভাইপোর কাছ থেকে বসতভিটার জায়গা কিনেছি৷’ আশরাফুলর কথায়, ‘আমার দু’বার যমজ সন্তান হয়েছে৷ কিন্তু আমি প্রতিপালন করতে পারিনি৷ অভাবের কারণে দুটো বাচ্চা বিক্রি করেছি৷ একজনকে ৫ হাজারে, আরেকজনকে ১৫ হাজারে বিক্রি করেছি৷’
আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংগঠনের সমীক্ষা বলছে, শুধু হাবিল বা আশরাফুল নয়৷ গাইবান্ধার বহু মানুষ এতটাই অভাবতাড়িত যে একমুঠো খাবার জোগাড়ের জন্যে নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দিতেও পিছপা হয় না৷ আর এদের পাশে দাঁড়ান না কোনও জনপ্রতিনিধিই৷ এমনই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের৷ তাঁদের আরও অভিযোগ, অভাবের সাগরে হাবুডুবু খাওয়া এই মানুষগুলোর পাশে কখনোই থাকেননি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তাই সন্তান বিক্রির মতো অবৈধ কাজ চলতেই থাকে৷ বাধা দেওয়ারও কেউ নেই৷ তবে একই এলাকায় দু’জনের এমন পদক্ষেপের খবর কানে পৌঁছাতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন৷ পরিবার দুটিকে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু তাতে কি বৃহত্তর কোনও সমস্যার সমাধান হবে? সেই প্রশ্নের খুব ইতিবাচক উত্তর কিন্তু মিলছে না৷ কারণ, দারিদ্র্য ঘোচানোর কাজে বাংলাদেশ প্রশাসন এখনও ততটা সাফল্য পায়নি বলেই বোঝা যাচ্ছে৷ নতুন হাসিনা সরকারের কাছে তাই বরাবরের মতো এবারও এটা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.