সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশেও হচ্ছে দুর্গাপুজোর উদযাপন। কিন্তু এর মাঝেই ঘটল অপ্রত্যাশিত ঘটনা। বন্দরনগর চট্টগ্রামের একটি দুর্গাপুজো মণ্ডপের অনুষ্ঠানে ইসলামী গান পরিবেশনের অভিযোগ উঠেছে। দায়ের হয়েছে মামলা। ইতিমধ্যে এই কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে চট্টগ্রামের জে এম সেন হলে চট্টগ্রাম মহানগর পুজো উদযাপন পরিষদ এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। অভিযোগ, অনুষ্ঠানের সময় ‘চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমি’ নামের একটি সংগঠন দুটি গান পরিবেশন করে। সেই গানের ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই পর হিন্দুদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করে সেনা-সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বাড়ানো হয়। ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ সনাতন ধর্মালম্বীরা সেখানকার রাস্তায় বিক্ষোভও দেখান।
পরে ডিসি ফরিদা খান ওই মণ্ডপে যান। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মামলা করার কথা বলেন। এদিন রাতে মহানগর পুজো উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য মঞ্চে উঠে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকে বহিষ্কারের ঘোষণা করেন। আশীষ বলেন, “আমি ও কমিটির অন্য সদস্যরা মণ্ডপে ছিলাম না। তারা এসে যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের কাছে দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশনের কথা বলে এবং তার সহযোগিতায় গান পরিবেশন করে। পরে আমরা এসে তাদের অনুরোধ করে গান শেষ করাই। এটা কেন ঘটল সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।” এর পরই বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় শহিদুল করিম ও নুরুল ইসলামকে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজি তারেক আজিজ শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে গোটা বিষয়টি জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমি নামের একটি সংগঠনের ছয় সদস্য এই দুর্গাপুজোর মঞ্চে দুটি গান পরিবেশন করে। এর মধ্যে একটি গান ছিল- ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’। এদিকে, চট্টগ্রামের ঘটনায় ইসলামি ছাত্রশিবিরের জড়িত থাকার অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম। ফেসবুকে তিনি এ বিষয়ে তাদের অবস্থান প্রকাশ করেন।
জাহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘অনেকেই এই ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরকে জড়াচ্ছেন, কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে বলছি, এর সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনও সম্পর্ক নেই। শিবির কখনও কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো কাজ সমর্থন করে না। তাই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে আমরা দাবি জানাচ্ছি, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হোক। যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনের আওতায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’ প্রসঙ্গত, নির্বিঘ্নে পুজো সম্পন্ন করার জন্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু এই ধরনের ঘটনায় প্রশাসনের অস্বস্তি বাড়বে বলেই মত বিশ্লেষকদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.